মোঃ এমদাদুল আলম
প্রেরণা
প্রকাশ: ০৮:৩১ পিএম, ৬ নভেম্বর, বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:৩২ এএম, ২০ নভেম্বর, বুধবার,২০২৪
বঙ্গ ব-দ্বীপে মহাজাগরণের মহাকাব্যে পরাধীনতার পিঞ্জর হতে মুক্তির প্রত্যয়ে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের দেদীপ্যমান অধ্যায় হচ্ছে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবস। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তান হানদার বাহিনীকে পরাজিত করে আমরা যে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই স্বাধীনতা সুরক্ষার অগ্নিগর্ভে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরের জন্ম। তাই আজকের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি স্বাধীনতা যুদ্ধের মহানায়ক, স্বাধীনতার মহান ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের মানসপুত্র, শহিদ রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে। আমরা আরো স্মরণ করি ত্রিশ লক্ষ শহিদ যাদের রক্তের বিনিময়ে এবং দুই লক্ষ মা-বোন যাদের নীরবে-ফুঁপিয়ে অশ্রু বিষর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আকাশে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য উদিত হয়েছিল।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পর মহান স্বধীনতার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য “গণতন্ত্র এবং বাক-স্বাধীনতা” আধিপত্যবাদী শাসক গোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতায় নির্বাসিত হওয়ার পরিণামে ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে সেনানিবাসসহ সর্বত্র চরম নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়া সেনানিবাসে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেন। তখন দেশের শাসন ব্যবস্থা অনেকটাই সেনানিবাস কেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। অপরদিকে আধিপত্যবাদীদের মদদে বাংলাদেশকে নতুন করদ রাজ্যে পরিণত করার অভিপ্রায়ে ৩ নভেম্বর পাল্টা অভ্যূত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি করা হয়। ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ আর কর্নেল সাফায়েত জামিল গং আবার ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মাকে প্রতিষ্ঠিত করার হীন স্বার্থে দেশপ্রেমিক সিপাহী জনতার অর্জিত স্বাধীনতার ললাটে বন্দুকের নল তাক করে। বিপন্ন স্বাধীনতার ক্রন্দন আর সশস্ত্র বাহিনীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় ও অসম্ভব জনপ্রিয় সেনাপ্রধানের অপমান বিপ্লবী সৈনিকগণের উর্দির সতীত্বে কলংকের দাগ লেপটে দেয়। তাই স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বর্গোৎসাহী পন নিয়ে ৬ নভেম্বর দিবাগত রাত একটায় রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে বিপ্লবী সৈনিকরা জিয়াকে মুক্ত করে বিপন্ন স্বাধীনতাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। আবারো জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ন্যায় ১৯৭৫ সালেও ধূমকেতুর মতো স্বাধীনতা রক্ষা করেন। পরবর্তীতে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জনগণের চরম অভিপ্রায়ের অভিব্যক্তি স্বরূপ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধূমকেতুর ন্যায় রাজর্ষিক আবির্ভাব ঘটে ইতিহাসের ক্ষণজন্মা পুরুষ জিয়াউর রহমানের।
২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে বিএনপি রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে আসলে জাতীয়তাবাদের প্রজন্মের পাঞ্জেরী দেশনায়ক তারেক রহমানের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ১/১১ এর কুশিলবদের এবং দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্রে আবারো ক্ষমতার মসনদে তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশ ১৫/১৬ বছরের বৃহৎ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। দেশকে নেতৃত্বহীন করার অভিপ্রায়ে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আপোষহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের জননী, দেশমাতা বেগম খালেদা জিয়াকে তাঁর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ক্যান্টনম্যান্টের বাড়ী হতে ব্যক্তি আক্রোশে উচ্ছেদ করা হয়। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ন্যায়সংগত নিয়মতান্ত্রিক গণআন্দোলনকে তথাকথিত চেতনার বাঁশি বাজিয়ে ম্যাকিয়াভেলির কুটপন্থায় গণতন্ত্রের ছদ্দাবেশে স্ট্যালিন, মুসলিনি কায়দায় দমন করা হয়। গ্যস্টাপো কায়দায় গুম খুন ও রাজনৈতিক হত্যার মাধ্যমে সারা বাংলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়। স্বামী-সন্তান, গুম হওয়া জায়া-জননীর গগণবিদরী ক্রন্দন রোলে, ‘‘মায়ের ডাক’’ এর ন্যায় বিচার প্রত্যাশার বুকফাটা হাহাকারে যখন বাংলার বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছিল, রাজনৈতিক কারণে হঠাৎ হারিয়ে যাওয়া পিতার ছবি নিয়ে ঘুমিয়ে পড়া কণ্যা শিশুর ফরিয়াদ যখন ধরণী আর সইতে পারছিলনা, তখন আবারো ৭ নভেম্বরের ন্যায় সাত আসমানের আরশে আজিমের অমোঘ রায়ে আবু সাঈদের রক্তস্নাত প্রশস্ত বুক, মুগ্ধর ফেরি করা প্রতিফোঁটা পানির বিনিময়ে, হাজারো ছাত্র জনতার রক্তে, দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ঐতিহাসিক ভূমিকায় ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত হতে আবারো স্বাধীনতা রক্ষা পায়, বৈষম্যের বিষবৃক্ষ উৎপাটিত হয়। সূচিত হয় নতুন বাংলাদেশ। আমরা এই নতুন বাংলাদেশের যোগ্য ধারক হতে চাই। ৭ নভেম্বরে এই হোক আমাদের শপথ।
আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধদের আত্মবলিদানে অর্জিত স্বাধীনতা যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে, সে জন্য অগ্রণী ব্যাংক অফিসার কল্যাণ সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা, বাংলাদেশ এর সকল সদস্য ভ্যানগার্ডের ন্যায় সদা সতর্ক। মহান বিপ্লব ও সংহতি দিবসের চেতনাকে ধারণ করে তারা স্বাধীনতা রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী হয়ে থাকবে নিরন্তর।
পরিশেষে এই স্মরণিকা প্রকাশে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে স্মরণিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য সফল হোক এই প্রত্যাশা করছি।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
লেখক - মোঃ এমদাদুল আলম
সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহবায়ক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
ইন্সটিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দিনকাল/এমএইচআর