স্মৃতি তুমি বেদনার শান্তি
অরাজনৈতিক হয়েও রাজনৈতিক হয়রানির শিকার ডা. জুবাইদা রহমান
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৩২ এএম, ৩ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫০ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও সচ্ছল পরিবারের সদস্য। তার পিতা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী। তার মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানু একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক। তার শ্বশুর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। তার শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্রের অত্যন্ত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী। তার পরীক্ষার ফলাফল চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ঈর্ষণীয় বিষয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হতে ডিস্টিংশনসহ সর্বোচ্চ মার্কস পেয়ে এমবিবিএস পাস করেছিলেন তিনি। দেশি-বিদেশি নানা লোভনীয় স্কলারশিপ প্রস্তাব ও উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের হাতছানিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এমবিবিএস পাস করে দেশের জনগণের সেবার ব্রত নিয়ে ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে একজন চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এমডি (কার্ডিওলোজি) কোর্সের ৩য় পর্বে অধ্যয়নরত অবস্থায় মারাত্মকভাবে অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ছুটি নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান। উন্নত চিকিৎসা দিয়ে স্বামীকে বাঁচানোর লক্ষ্যে নিজের ক্যারিয়ারের কথা বিবেচনা না করে একজন আদর্শ স্ত্রীর দায়িত্ববোধ হতে স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে যান ডা. জুবাইদা রহমান। স্বামীর সুস্থতার জন্য নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে তিনি একজন আদর্শ বাংলাদেশী নারীসত্তার পরিচয় দেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য গিয়েও থামিয়ে রাখেননি তার উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। যুক্তরাজ্যের ইমপেরিয়াল কলেজ অব লন্ডনের মাস্টার্স অব প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি (এমএসসি ইন কার্ডিওলজি) কোর্সে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশ, নাইজেরিয়া, চীনসহ মোট ৫৫টি দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিস্টিংশনসহ শতকরা ৮৩ ভাগ নম্বর পেয়ে প্রথম হন ডা. জুবাইদা। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন অসাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীর পরিচয় দিয়েছেন।
ডা. জুবাইদা একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও বারবার হীন রাজনৈতিক নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। মারাত্মকভাবে অসুস্থ স্বামীর উন্নত চিকিৎসার্থে তার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বহিঃ বাংলাদেশ ছুটিতে থাকার সময় সরকারি চাকরির সকল বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করেই তাকে চাকরি হতে অব্যাহতি দেয়া হয়। তিনি বারবার সরকারি সকল নিয়ম মেনে তার বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি বৃদ্ধি করার জন্য আবেদন করলেও মন্ত্রণালয় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তার ছুটি মঞ্জুর না করা হলেও তা তাকে জানানো হয়নি। অথচ বিভিন্ন সময় পত্রিকায় নানারকম ভুল রিপোর্ট প্রকাশের মাধ্যমে তার সম্মানহানি করা হয়েছে। এসব মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের বিষয়ে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ জানানো হলেও তা আমলে নেয়া হয়নি কখনো। এর মাধ্যমে দেশের একজন সম্মানিত নাগরিকের অধিকার ক্ষুণœ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারি সার্ভিসের অনেক কর্মকর্তাই ৫ বছর বহিঃ বাংলাদেশ ছুটি ভোগ করে বিদেশ হতে আবেদন করেই ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করেছেন। এর অসংখ্য নজির পাওয়া যাবে। ডা. জুবাইদার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এর মাধ্যমে একজন অসম্ভব মেধাবীর সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। জাতি বঞ্চিত হয়েছে একজন মেধাবীর সেবা প্রাপ্তি হতে। এখানেই শেষ হয়নি অন্যায় আচরণ। এই অরাজনৈতিক মেধাবী নারীর ক্ষুদ্র চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সংসদে নিয়ে আসে সরকার। এই অতি সামান্য ও অনুভূতিপ্রবণ একান্তই ব্যক্তি পর্যায়ের একটি সংবাদ শুধুমাত্র হীন উদ্দেশ্যেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী সংসদে নিয়ে আসেন। কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির বিষয় অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের অন্য সদস্যগণও জানতে পারে না। অথচ ডা. জুবাইদার চাকরিচ্যুতির বিষয়টি ঢাকঢোল পিটিয়ে সংসদে ঘোষণা করা হয়। ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ।’ কোনো সরকারি কর্মকর্তার চাকরিচ্যুতির খবর সে দেশের সংসদে উপস্থাপন করা হয়, পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম নজির আর একটি পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একজন সরকারি কর্মকর্তার বরখাস্তের বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করে হাসাহাসির অবতারণা করা হয়।
কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে তার চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদান করা হতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে কোনো দেশের সংসদে আলোচনা করা একটি অসুস্থ মানসিকতার পরিচয় বহন করে। ডা. জুবাইদার চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করে এবং তা নিয়ে সংসদে হাস্যরসের অবতারণা করে দেশের একজন নাগরিকের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয় সে সময়। একই সঙ্গে সংসদে বিষয়টি আলোচনা করে দেশের একজন সম্মানিত নারীর সম্মানের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়।
ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ও সচ্ছল পরিবারের সদস্য। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের কোনো প্রয়োজনই নেই তার। বরং তার পরিবার তাদের সম্পদ মানবকল্যাণে ব্যয় করতেই অভ্যস্ত। সমাজসেবামূলক সংগঠনের মাধ্যমে লক্ষাধিক শিশু ও মহিলা সরাসরি উপকৃত হয়েছে। সংগঠনটির সকল কার্যক্রমই অলাভজনকভাবে পরিচালিত হয়। সমাজসেবামূলক সংগঠনটি দীর্ঘদিন যাবৎ নারীর ক্ষমতায়ন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করে যাচ্ছে। শুধুমাত্র অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা ও সমাজে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ডা. জুবাইদার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে শত্রুর হাত থেকে দেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাসহ দেশের সকল রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শহীদ জিয়া পরিবারের সদস্য হয়েও ডা. জুবাইদা রহমান কখনো বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। তিনি সব সময় ছিলেন রাজনীতি-বিমুখ। তার ধ্যানজ্ঞান ছিল শুধুই মানবসেবা।
ডা. জুবাইদার প্রায় সকল সম্পত্তিই উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। এ অবস্থায় তার মতো একজন সম্মানিত নাগরিক ও সমাজসেবক নারীর বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব গোপন করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট, হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বর্তমানে স্বামীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে রয়েছেন। মূল বিবাদী দেশের বাইরে থাকাবস্থায় এ রকম একটি স্পর্শকাতর মামলার কার্যক্রম তার আইনজীবীর পক্ষে যথাযথভাবে পরিচালনা করা মোটেও সম্ভবপর নয়। ডা. জুবাইদা রহমান ও তার পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে এ ধরনের মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা পরিচালনা করা হচ্ছে বলে দেশবাসী মনে করে।