ভোলা থেকে রাতের আঁধারে পালিয়ে এসেছিল এসআই কনক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৪:৩২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ভোলা থেকে নারায়ণগঞ্জে বদলী হয়ে এসে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভিলেনে পরিণত হওয়া এসআই মাহফুজুর রহমান কনকের অপকর্মের থলের বেড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শান্তিপূন্য র্যালিতে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুরু হওয়া সংঘর্ষে এসআই কনক চায়নিজ রাইফেল দিয়ে গুলি বর্ষণ করেন। এতে যুবদল কর্মী শাওন আহমেদ রাজা নিহত হন। চায়নিজ রাইফেল হাতে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের এসআই কনকের গুলি বর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তার অপকর্ম নিয়ে খোদ পুলিশ সদস্যরাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। পুলিশেরই একটি সূত্র জানায়, ভোলা থেকে বদলীর পর রাতের আঁধারে সেখান থেকে পালিয়ে আসে কনক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের বেশ কয়েকটি সূত্র জানায়, এসআই কনক এসআই ১৭তম ব্যাচের। তার বাড়ি ফরিদপুরে। ভোলা জেলা পুলিশে দীর্ঘদিন চাকুরি করেছেন। ভোলায় ছিলেন আর ওয়ান পদে। এ পদে থাকাকালীন সেখানে বদলী হয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন থানায় পদায়নের কথা বলে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য করেছেন।
গত ১ আগষ্ট ভোলায় বিএনপির কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আবদুর রহিম ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভোলা জেলা ছাত্র দলের সভাপতি নূরে আলম। ওই ঘটনার পর ভোলা জেলা পুলিশের ব্যাপক রদবদল হয়। সেই রদবদলে সেখানে আর ওয়ান পদে কর্মরত এসআই কনকেরও বদলীর আদেশ হয়।
এদিকে ওই সময় অনেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভোলার বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়িতে পদায়নের কথা বলে কনক বিশাল অংকের টাকা ঘুষ নেয় অনেক পুলিশ কর্মকর্তার কাছ থেকে। হঠাৎ বদলী হওয় যাওয়ায় এবং ভোলায় নতুন এসপি পদায়িত হওয়ায় তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ফলে যাদের কাছ থেকে পদায়নের কথা বলে কনক টাকা নিয়েছিলেন তারা তাদের টাকা ফেরৎ চাইতে থাকে।
এদিকে বদলী জনিত কারণে ভোলা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়। কিন্তু কনক চাইছিল না তার বদলীর খবর জেলা পুলিশের মধ্যে প্রচার পাক। এতে যাদের কাছ থেকে সে টাকা নিয়েছে তারা প্রকাশ্যে ঘুষের টাকা ফেরৎ চেয়ে বসতে পারে। একারণে কনক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগের দিন রাতে ভোলার পুলিশ সুপারের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিয়ে রাতের আঁধারেই তড়িঘড়ি নারায়ণগঞ্জে চলে আসে।
ওদিকে নারায়ণগঞ্জে চলে আসার পর কনকের পদায়ন হয় ডিবিতে। আর গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির র্যালিতে বাধা দিতে ডিবির যে টিমকে নগরের ২ নম্বর রেলগেটে পাঠানো হয় সেখানে কনকও ছিল।
গত বৃহস্পতিবার সংঘর্ষের ঘটনার আগের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপির শান্তিপূন্য র্যালিটি নগরের আলী আহাম্মেদ মিলনায়তনের সামনে থেকে শুরু হয়ে ২ নম্বর রেলগেটের কাছাকাছি আসামাত্র ডিবি’র এসআই কনকসহ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমানের নেতৃত্বে স্বল্প সংখ্যক পুলিশ র্যালিতে বিনা উস্কানিতে লাঠি চার্জ শুরু করে। তারা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি লাঠিচার্জ করলে বেঁধে যায় সংঘর্ষ। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে কনক চায়নিজ রাইফেলে গুলি লোড করে একের পর এক গুলি বর্ষণ শুরু করেন বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ করে। তারই ছোঁড়া একটি গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন নিহত হয়।