সোহেল সামি
'সংখ্যালঘু' কার্ড দিয়ে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের খেলায় মেতে উঠেছে ভারত
প্রকাশ: ০৮:৪২ পিএম, ৩ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪ | আপডেট: ০১:২২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সংখ্যালঘু ইস্যুকে কেন্দ্র করে এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র পাকানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে তিন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী একত্রিত হয়ে মাঠে নেমেছে, বিজেপিপন্থী উগ্র হিন্দু, আওয়ামীপন্থী হিন্দু ও হিন্দু-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সম্মিলিত এই ষড়যন্ত্রে সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করছে স্বয়ং ভারত রাষ্ট্র।
ঐক্য পরিষদ দাবি করছে, ৫ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক আক্রমণ চালিয়ে ৯ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। শুধু দাবি করেই ক্ষান্ত হয় নাই, বক্তব্যটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে তারা।
এদিকে ইন্ডিয়ান রাবিশ মিডিয়ায় চালানো নিরন্তর মিথ্যাচার আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় গুরুত্ব পাচ্ছে। বার বার মিথ্যা বলে তাকে সত্যে পরিনত করছে চানক্যের সন্তানেরা। নিউইয়র্কের রাস্তায় রাস্তায় বিলবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশে হিন্দু জেনোসাইড চলছে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। এমনকি নির্বাচনের ডামাডোলে ট্রাম্পকে দিয়ে পর্যন্ত টুইট করানো হয়েছে তাদের দাবির পক্ষে।
অথচ নেত্র নিউজের দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন এক চিত্র। অভিযুক্ত সব ঘটনার সত্যতা যেমন পায় নি তেমনি সহিংসতার যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তা সাম্প্রদায়িক ছিলো না বলে দাবি করছে পত্রিকাটি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রে ফেরার রক্তক্ষয়ী বিপ্লব পরবর্তী পরাজিত ফ্যাসিস্ট রেজিম ও নিপীড়কের ভুমিকায় থাকা তাদের দোসরদের ওপর মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ছিলো ঘটনাগুলো, বলছে নেত্র নিউজ।
ঘটনাগুলোকে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা কিংবা সাম্প্রদায়িকতার মোড়কে আবদ্ধ করার সুযোগ নেই বলে দাবি তাদের। পত্রিকাটি সহিংসতার বহু উদাহরণ টেনে দেখিয়েছে, হিন্দুর তুলনায় মুসলিম আক্রান্তের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। এবং এরা সবাই ছিলো আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর ও নিপীড়ক। যাকে বিপ্লব পরবর্তী পরাজিত শক্তির ওপর জিঘাংসার যতসামান্যই বলা চলে।
নেত্র নিউজের অনুসন্ধানে বিপ্লব পরবর্তী আরো একটা চিত্র উঠে এসেছে। তা হলো, সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানদের হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাড়ানোর চিত্র। দেখা যাচ্ছে, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের মুসলমান বুক দিয়ে হিন্দুদের রক্ষা করেছে। যেভাবে সবাই মিলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবগুলো নির্বিঘ্ন করতে সহযোগিতা করেছে, তা ছিলো অভূতপূর্ব। যে কারনে গত এক দশকে দুর্গাপূজায় সবচেয়ে কম সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এবার।
তবু উগ্র আওয়ামী হিন্দুদের এই ধরনের প্রচারণা এবং প্রগতিশীল হিন্দুদের চুপ থাকা, ভবিষ্যত বাংলাদেশে হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে অনেকে মনে করছেন। এ জন্য মুসলিম নয়, হিন্দুরাই ভারতের কুটচালে পা দিয়ে নিজ দেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং সম্প্রীতি নষ্টের কারন হচ্ছে বলে আশংকা তাদের। অবশ্য সবাই নয়, তয়, বুঝে-না বুঝে সবার সমাবেশে অংশগ্রহণ উৎকন্ঠিত হবার কারনই বটে।
বিজেপির সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী হিন্দু আসলে বাংলাদেশকে ধারণ করে না৷ তারা অখন্ড ভারতের স্বপ্নে বিভোর। তারা এদেশ থেকে টাকা রোজকার করে আর ভারতে পাচার করে, সেখানে বাড়ি বানায়। বাংলাদেশপন্থী হিন্দুদের উচিত এদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দায়িত্বশীল ভুমিকা নেওয়া। হিন্দু-মুসলিম ভাতৃত্ব বজায়ে রাখার তাগিদে, নিজ উদ্যোগে এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো ও প্রতিবাদ করা। অথচ সেটির ছিটেফোঁটাও চোখে পড়ছে না।
বরং তারা ইস্কনের টাকায়, র'য়ের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে, কমিউনিটির ব্যানারে বড়ো বড়ো জমায়েত করে উস্কানিমূলক বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে চলেছে। উদ্ভট দাবি-দাওয়া উত্থাপনের নাম করে প্রতিনিয়ত দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। ফলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের গড়ে ওঠা সম্প্রীতির পরিবেশ ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর ভারত, বিশেষ করে উগ্র হিন্দুত্ব বাদি বিজেপি-আরএসএসের এটাই টার্গেট বলে মনে করছেন রাষ্ট্র, সমাজ ও ধর্ম বিশ্লেষকেরা। উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলায়, পরাজিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পন্থী হিন্দুদের আরো জোড়ালো ভূমিকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
লেখক : সোহেল সামি
শিক্ষক/সাংবাদিক
দিনকাল/এমএইচআর