জমিদখল, চাঁদা দাবী ও মামলা তুলে নেওয়ার চাপ, মুক্তিযোদ্ধাকে ভিটেছাড়া করার হুমকী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৬ পিএম, ২৯ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫১ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
আশি বছরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া হাফিজুর রহমানের এখন দিন কাটছে আতংকে। প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকী আর ভিটে থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র মোকাবেল করতে করতে এই পড়ন্ত বয়সে বেশ অসহায় হয়ে পড়েছেন তিনি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ফুরসন্দি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মোঃ হাফিজুর রহমানের এমন অসহায়ত্ব চলছে বছরের পর বছর। পিছু ছাড়ছে না ষড়যন্ত্রকারীরা। ইতিমধ্যে হাফিজুর রহমানের জমি-জামা দখল করে নিয়েছে মহলটি। কেটে নিয়েছে জমির গাছ। দাবি করা হচ্ছে বড় অংকের চাঁদা। সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য মিলেছে।
মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান (৮০) জানান, দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ অবস্থায় তার স্ত্রীকে নিয়ে ফুরসন্দি গ্রামের একটি মাটির ঘরে একাকি বসবাস করেন। তার তিন কন্যা বিয়ের পর স্বামী-সংসারে। একমাত্র ছেলে ঢাকায় চাকরী করেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থ ও বাড়িতে স্ত্রীকে একা থাকার সুযোগে একই গ্রামের কিছু প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় দুর্বৃত্তরা পিতার নামীয় জমি থেকে ৭০ হাজার টাকার একটি গাছ কেটে নেয়।
গ্রামের মিয়া বংশের পক্ষ থেকে ২৪ শতক জমি গ্রামের ঈদগাঁর নামে দান করা হলেও অধিকাংশ জায়গা জোর দখল করে নিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সেনা সদস্য হয়েও তিনি বার বার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।
একই গ্রামের মৃত বাবর আলীর ছেলে ভুমি দস্যু মধু, মোহন ও অর্শ্বিনী কুমারের পুত্র উৎপল গং তার বসতবাড়ি জোর করে নাম মাত্র মুল্যে ক্রয় করার জন্য চাপ দিয়ে আসছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় তারা তার কাছে ৫ লাখ চাঁদা দাবী করে আসছে। দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ করতে না পারায় গত ৬ এপ্রিল দুপুরে মধু, মোহন ও উৎপল লাঠি-শোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার বাড়িতে হামলা করে।
এ সময় তারা তাকে এবং তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও মেয়ে শাহনাজ পারভীনকে মারধর করে। স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও কন্যা শাহনাজ পারভীন বিউটির গলায় থাকা দুইটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাফিজুর রহমান ঝিনাইদহ অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল আদালতে গত ১২ মে তিন জনকে আসামী করে ৪৪৭/৩২৩/৩৫৪/৩৭৯/৩৮৫/৫০৬ দঃবিঃ আইনে মামলা দায়ের করেন।
গত ১৮ মে পুলিশ আসামী মধু, উৎপল ও মোহনকে গ্রেফতার করে। ওই তিনজন গ্রেফতারের পর গত ২০ মে সন্ত্রীদের সহযোগী হালিম, কামাল কাজি, সোনালী কাজি, জসিম, জায়েদা রেজাউল ও ইবরা দলবল নিয়ে বসতবাড়ী ঘেরাও করে গালি-গালাজ করে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকী দিয়ে আসে।
এছাড়া ঘটনায় কেউ আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করলে তাদেরকেও দেখে নেয়ার হুমকী দিচ্ছে সন্ত্রাসী গ্রুপটি। এ ঘটনার পর থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে।
এ বিষয়ে ফুরসন্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড.আব্দুল মালেক ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন, তিনি অনেকবার বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেছেন কিন্তু ওই গং কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।