কুড়িগ্রামের উলিপুরে দেবোত্তর সম্পত্তিতে রক্ষা করতে গিয়ে নারীরা হামলার শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৪ এএম, ২৭ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৩ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের উলিপুরে দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও নারীদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে শতাধিক নারী-শিশু-পুরুষ উপজেলা সদরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
আজ বুধবার উপজেলার ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ি এলাকায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমি ও গৃহপ্রদান আশ্রায়ন-২ প্রকল্পের আওতায় উলিপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৩শ ৫০টি গৃহ নির্মানের বরাদ্দ আসে। সে মোতাবেক প্রথম পর্যায়ে ২শ গৃহের নির্মান কাজ সমাপ্ত হয়। বর্তমানে ১শ ৫০টি গৃহ নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের শতাধিক ঘর নির্মান কাজ চলমান রয়েছে।
উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মুন্সিবাড়ির দেবোত্তর সম্পত্তির সেবায়েত পঙ্ক চন্দ্র মহন্ত (৬৫) বলেন, ধরনীবাড়ী ইউনিয়নের তৎকালীন জোতদার ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সির দানকৃত ১৮ একর দেবত্তর সম্পত্তিতে শ্রী শ্রী সার্বজনীন দূর্গা মন্দির, লক্ষী নারায়ন মন্দির ও রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দির রয়েছে। সেখানে আমরা দীর্ঘদিন থেকে পূর্জা অর্চনা, প্রসাদ বিতরণ, সেবায়েতের ভরনপোষণ, মন্দিরের সংস্কারসহ সার্বিক ধর্মীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছি। তিনি দাবী করেন এই জায়গা জমি দেবোত্তর সম্পত্তি।
তিনি আরও বলেন, কিছুদিন থেকে উপজেলা প্রশাসন দেবোত্তর সম্পত্তিকে সরকারি খাস জমি দাবী করে সেখানে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য শতাধিক গৃহ নির্মানের কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যেই অর্ধেক গৃহের কাজ সমাপ্ত করেছেন। মন্দির সংলগ্ন জমিতে আমরা প্রতি বছর অষ্টপ্রহর ও নাম কীর্ত্তন করে আসছি। সেই জমিতে গৃহ নির্মানের কাজ শুরু করলে এলাকার হিন্দু সম্প্রদায় এতে বাঁধা দেন। এ বিষয়টি নিয়ে ১০-১২ দিন থেকে উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে একাধিকবার এসে মিটিং করে মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মান করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
আজ বুধবার সকালে দেবোত্তর সম্পত্তিতে পুণরায় গৃহ নির্মানের কাজ শুরু করলে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী-শিশু ও পুরুষ সকলে মিলে এতে বাঁধা প্রদান করেন। এ সময় গৃহ নির্মান কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা কয়েকজন নারীদের উপর হামলা চালায়।
হামলার শিকার জবা রানী (২৬) ও দিপ্তী রানী (৩০) অভিযোগ করে বলেন, মন্দিরের জমি রক্ষার দাবীতে আমরা ঘর তুলতে বাঁধা দেয়ায় উপস্থিত প্রশাসনের সামনে মুক্তা ও তার লোকজন আমাদের গায়ে হাত দেয়। এ সময় তারা আমাদের পড়নের কাপড় ছিড়ে ফেলে ও মারপিট করে হাতের আঙ্গুলসহ বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। তারা আরও বলেন, এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় প্রতিবেশি রাসেল মিয়ার উপরও তারা হামলা করে। ঘটনার প্রতিবাদে আমরা বুধবার বিকালে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করতে গেলে সেখানেও তারা আমাদের উপর আক্রমন করেন। এ ঘটনায় এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতংক বিরাজ করছে। তারা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন।
ওই এলাকার মায়া রানী মহন্ত (৩০), সেলি রানী সরকার (৫০), সেফালী রানী গোস্বামী (৪৫), সুধা রানী মহন্ত (৩০) ও মন্দিরের পূজারী রতন মহন্ত (৩২) জানান, দেবোত্তর সম্পত্তিতে পূর্বেও তারা ৫০টির অধিক গৃহ নির্মান করেছে। বর্তমানে মন্দির সংলগ্ন জমিতে তারা গৃহনির্মান করার সামগ্রি ইট-বালু এনে ফেলেছে। এতে আমরা আপত্তি করলে উপজেলা সদর থেকে মুক্তার নেতৃত্বে একদল যুবক এসে মহিলাদের উপর হামলা চালায়। আমরা দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষা ও হামলার বিচার প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাই। কেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চান জানতে চাইলে তারা বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সামনেই আমাদের উপর হামলা হলেও তারা বাঁধা দেননি।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ উলিপুর উপজেলা শাখার সভাপতি সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা জানান, ওই সম্পত্তি ইতিপূর্বে সরকার খাস খতিয়ানে নেয়ায়, সেখানে সামান্য কিছু দেবোত্তর সম্পত্তি রয়েছে। মন্দির সংলগ্ন জমিতে যাতে গৃহ নির্মান না হয় সে বিষয়ে আমি প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও গৃহ নির্মান প্রকল্পের সদস্য সচিব সিরাজউদ দৌল্লা বলেন, দেবোত্তর সম্পত্তিতে গৃহ নির্মান করা হচ্ছে না। মন্দির সংলগ্ন জায়গায় গৃহ নির্মান করা হয়নি। ভূমি অফিস কর্তৃক দেয়া সরকারের খাস জায়গায় গৃহ নির্মান করা হচ্ছে। জায়গাগুলো পূর্বে দেবোত্তরের সম্পত্তি ছিল। তিনি আরোও বলেন, নির্মান কাজ চলমান থাকা অবস্থায় স্থানীয় লোকজন দেবোত্তর সস্পত্তি দাবী করে তা ভেঙে দেন। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে দেখা শুনার দায়িত্বে থাকা মুক্তা নামের একজন বাঁধা দিলে তার উপর হামলা চালানো হয়। মুক্তার লোকজন কৃর্তক মহিলাদের উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনা সঠিক নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রকল্পের সভাপতি নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, সেখানে হামলার কোন ঘটনা ঘটেনি। যারা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন তারাই গৃহ নির্মানের কাজের লোকজনের উপর হামলা চালিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আমরা হিন্দু সম্প্রদায় নেতাদের সঙ্গে দ্রুত্র বসবো।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ইমতিয়াজ কবীর জানান, মন্দরি এলাকায় সরকারি ঘর নির্মানকে কেন্দ্র করে অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল হলেও এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।