সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আটক পেঁয়াজ ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৭ পিএম, ১০ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৩৭ এএম, ৮ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগ জাল কাগজে আনা ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা মূল্যের আটক ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) জাল করে গত ২ মে ৬০০ টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করে বিএইচ ট্রেডার্স। তবে জোর তদবির আর সমঝোতা শেষে গত বুধবার শুল্ক বিভাগ পেঁয়াজের চালানটি ছেড়ে দেয় গোপনে। এ নিয়ে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে অন্যান্য আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, পেঁয়াজের চালানটি আটকের পর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সঙ্গে সমঝোতায় ব্যস্ত ছিলেন শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা। পরে চালানটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে যথারীতি শুল্ক কর আদায় করা হয়েছে। আটকের সময় শুল্ক কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন আইপি জালের কারণে পেঁয়াজের চালানটি আটক করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএইচ ট্রেডার্সের মালিক দুরুল হাসান বাবুলের আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) মেয়াদ ছিল ৩০ এপ্রিল। কিন্তু আমদানিকারক পেঁয়াজ নিয়ে আসেন ২ মে। বিএইচ ট্রেডার্সের নামে ইস্যুকৃত মূল আমদানিপত্রে দেখা দেখা গেছে, তার মেয়াদ ছিল ৩০ এপ্রিল। কিন্তু পেঁয়াজ আনার সময় বিএইচ ট্রেডার্স আমদানি পত্রের মূল কপি না দেখিয়ে একটি ফটোকপি জমা দেন। ফটোকপিতে ৩০ এপ্রিলের স্থলে দুই মাস লেখা রয়েছে।
জাল আইপির কারণে পেঁয়াজের চালানটি আটক করেন শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা ওইদিন স্পষ্ট করে বলেছিলেন, আইপি জালের কারণে পেঁয়াজ আটকানো হয়েছে। বন্দর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, অবৈধভাবে আনা পেঁয়াজ আটকানোর পর শুল্ক বিভাগ আমদানি অনুমতিপত্রের মূল কপি চাইলেও আমদানিকারক বা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তা দেখাতে পারেনি। এরই মধ্যে আমদানিককারককে মূল কপি আনার জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও মূল কপি দিতে পারেনি আমদারিকারক।
অন্যদিকে এই সময়ে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমদানিকারকের গোপনে দরকষাকষি চলতে থাকে। শেষে সমঝোতা হলে গত বুধবার চালানটি ছাড়ে শুল্ক বিভাগ। আমদানিকারক পেঁয়াজগুলো বন্দরেই বিক্রি করে চলে যান। বিষয়টি প্রকাশ্যে ঘটায় অন্যান্য আমদানিকারক ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
তারা বলেছেন, জাল আমদানি পত্রে আনা পেঁয়াজ ধরা পড়ার পর শুল্ক আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি ছিল। কিন্তু এখানকার শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা তা না করে সময়ক্ষেপণের পর চালানটি ছেড়ে দিয়েছেন সমঝোতার মাধ্যমে। কী কারণে পেঁয়াজ আটকানো হয়েছিল, আবার এখন কী কারণে ছাড়া হলো, এই বিষয়ে বন্দর শুল্ক বিভাগের কোনো কর্মকর্তাই এর সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে জাল আমদানিপত্রের কারণে আটকানোর তিন দিন পর কোন কাগজবলে এসব পেঁয়াজ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে-জানতে চাইলে সোনামসজিদ স্থলবন্দর শুল্ক বিভাগের পরিদর্শক পিযুষ কুমার বিশ্বাস গতকাল রবিবার কোন কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে কাস্টমস সুপারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। যদিও পেঁয়াজ আটকের দিন এই পিযুষ কুমার বিশ্বাস বলেছিলেন, বিএইচ ট্রেডার্সের আমদানিপত্র জাল।
বন্দর শুল্ক বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। বন্দর শুল্ক বিভাগের সহকারী সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, আমদানিকারক পরে কোয়ারেন্টিন বিভাগ থেকে একটি সনদ এনে দেওয়ায় আমরা পেঁয়াজ ছেড়ে দিয়েছি। আমদানির কাগজপত্র ঠিক ছিল বলে দাবি করেন সহকারী সুপার। তবে কেন পেঁয়াজ আটকানো হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। কোয়ারেন্টিন সনদ হচ্ছে আমদানি পণ্যের মধ্যে কোনো সংক্রমণ বা দোষ-ত্রুটি নেই এমন একটি সনদ। এই সনদ আমদানি নথিপত্রের অংশ নয়।
আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ বিএইচ ট্রেডার্সের মালিক দুরুল হাসান বলেন, তার আইপির মেয়াদ ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। তবে ৩০ এপ্রিল শুক্রবার ও পরের দিন ১ মে সরকারি ছুটির দিন থাকায় তিনি পেঁয়াজের চালানটি ভারত থেকে বন্দরে আনতে পারেননি। এ কারণে তিনি ২ মে পেঁয়াজগুলো এনেছিলেন।