কবর থেকে উঠতে পারে গৃহবধূ শিলার মরদেহ, থানায় হত্যা মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৬ পিএম, ৫ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:২৪ পিএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় গৃহবধূ শিলাকে (৩২) হত্যার অভিযোগে থানায় মামলা হয়েছে। গত সোমবার রাতে নিহতের ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলা নস্বর ০৬। নিহত নারী বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের আসাদ মুন্সী ওরফে উজ্জল (৩৫) এর স্ত্রী।
এতথ্য নিশ্চিত করে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিব হাসান জানান, গৃহবুধু শিলাকে হত্যার অভিযোগ থানায় মামলা হয়েছে। নিহতের ভাই আব্বাস বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। তিনি আরো বলেন, ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে। কোর্টের নির্দেশে যেকোন সময় কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হতে পারে।
এরআগে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় গত ২০ এপ্রিল নিহতের লাশ দাফন করে শ্বশুর বাড়ীর লোকজন। লাশ দাফনের ৬ দিন পর হত্যার অভিযোগ তুলেন স্বজনরা। যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী, শ্বশুড়, শ্বাশুড়ীসহ ৪/৫ জন মিলে তাকে পিটিয়ে ও শ্বাঃসরোধ করে হত্যা করা হয়। এমন অভিযোগ তুলে রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে থানায় লিখিত এজাহার দেন নিহতের ভাই আব্বাস মিয়া।
নিহতের পরিবার সুত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আশরাফুল হোসেন মিয়া'র কন্যা শিলা'র সাথে প্রায় ১৪ বছর আগে শিলার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই মোটা অংকের যৌতুক অথবা সেনাবাহিনীর চাকুরীর জন্য স্বামী উজ্জল, শ্বশুর ধুনা মুন্সী ও শ্বাশুড়ী মমতাজ বেগম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে।
গত ১৯ এপ্রিল বিকেল তিনটায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন গুরুতর অসুস্থতার কথা জানায় শিলা'র মাকে। খবর পেয়ে শিলার মা ও দুই ভাবী ছুটে এসে শিলাকে অসুস্থ দেখতে পায়। এসময় শিলার মা, ভাবি ও স্বামী অটোযোগে প্রথমে কবিরাজ বাড়ির দিকে যায়। পথে শিলার অবস্থার আরো অবনতি হলে কুষ্টিয়া সদর হাসাপাতালের দিকে যায় অটো গাড়ি। হাসপাতালে যাওয়ার পথে বাঁশগ্রাম বাজার এলাকায় পৌছালে স্বামী উজ্জল পালিয়ে যায়।
স্বামী পালিয়ে যাওয়ার পর শ্বশুর বাড়ির লোকজন পথের মধ্যেই আহত শিলা, শিলার মা, ভাবি ও অটো চালককে মারধর করে। এছাড়াও শিলাকে হাসপাতালে না নেওয়ার জন্য হত্যার হুমকি প্রদান করা হয়। হুমকি উপেক্ষা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিলা মারা যায়। পরে শিলার লাশ নিয়ে ওর মা ও ভাবি শ্বশুর বাড়ি পৌছায়।
আরো জানা যায়, শিলা মৃত্যুর বিষয় পুলিশ ও স্বজনদের না জানানোর জন্য প্রথমে শিলার মা, ভাবি ও অটোচালককে মারধর করে। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে ঘরে জিম্মি করে রাখে। এখবর পেয়ে ২০ এপ্রিল ভোরে শিলার বাবা ও ভাই আব্বাস শিলা'র শ্বশুড় বাড়ি আসে। এসময়র তাদেরকেউ ঘরে জিম্মি করে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। কোন প্রকার সহযোগীতা না পেয়ে প্রাণভয়ে ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯ টায় বাঁশগ্রাম কবরস্থানে রক্তাক্ত লাশ দাফন করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন শিলা'র বাবারা।
এবিষয়ে নিহতের বড় ভাই ও এজাহার দায়েরকারী আবু আব্বাস মিয়া বলেন, ১৪ বছর আগে উজ্জলের সাথে বোনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকা ও সেনাবাহিনীর চাকুরীর জন্য বোনকে ওরা শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিল।
হঠাৎ ১৯ এপ্রিল বোনের অসুস্থতার খবর আসে বাসায়। খবর পেয়ে আমার মা, স্ত্রী ও ভাবি শিলার শ্বশুড় বাড়ি যায়। গিয়ে দেখে শিলার কান, মুখ ও নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তখন দ্রুত ওর শুশুড় বাড়ির লোকজন কবিরাজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। পথে বোনের অবস্থা খারাপ হলে কুষ্টিয়া হাসপাতালের দিকে গাড়ি ঘুরানো হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাঁশগ্রাম বাজারের কাছে পৌছালে বোনের স্বামী উজ্জল পালিয়ে যায় এবং উজ্জলের লোকজন আমার বোন,মা, স্ত্রী, ভাবি ও অটোচালককে মারধর করে হাসপাতালে নিতে বাঁধা দেয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে বোন মারা যায়।
তিনি আরো বলেন, বোনের লাশ নিয়ে বাড়ি পৌছালে বিষয়টি গোপন করতে আমার মা, স্ত্রী, ভাবিদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখায়। এরপর ২০ এপ্রিল ভোরে আমি, আমার বাবা ও ভাই বোনের বাড়ি আসি। এসময় উজ্জলের লোকজন আমাদেরও জিম্মি করে প্রাণনাশের ভয় দেখায়। আমরা ভয়ে লাশ দাফন করে দ্রুত চলে যায়।
আবু আব্বাস মিয়া বলেন, নিরাপত্তার অভাবে কাউকে কিছু জানাতে পারিনি। পরে বাড়ি ফিরিয়ে আত্মীয়দের সাথে পরামর্শ করে ২৫ এপ্রিল রাতে কুমারখালী থানায় বিচারের আশায় অভিযোগ দিয়েছি।
এবিষয়ে ঘাতক স্বামী আসাদ মুন্সী ওরফে উজ্জল বলেন, আমি কোনদিন বউকে মারিনি। আপনারা (সাংবাদিকরা) বিষয়টি ভুলে যান। আমার ভুল হয়েছে।