পুলিশের ভুলে নিরপরাধ হাছিনার দেড়বছর কারাবাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩২ পিএম, ৩ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৬ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
নামের আংশিক মিল থাকায় টেকনাফ থানা পুলিশের ভুলের কারণে হাছিনা বেগম (৪০) নামের এক পান দোকানদারের জীবন থেকে ঝরে গেলো দেড়টি বছর। নিরীহ এই মহিলার দুগ্ধপোষ্য দেড় বছরের এক শিশু সন্তান বঞ্চিত হয় মায়ের দুধ পান থেকে। স্ত্রী জেলে যাওয়ার পর লবণমাঠের দিনমজুর স্বামী দুই শিশু সন্তানকে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
এদিকে, গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়া হাছিনা বেগম মামলার আসল আসামি কি না তা আদালতকে জানাতে টেকনাফ পুলিশের সময় লেগেছে ৬ মাসেরও অধিক। এভাবে দেড়বছর যাবত নিরীহ হাছিনা বেগম কারাগারে হাছিনা আক্তারের সাজাভোগ করছেন।
গতকাল রবিবার (২ মে) টেকনাফ থানার ওসি (অপারেশন) মো. খোরশেদ আলম আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে জানান, কারাগারে যাওয়া হাছিনা বেগম মামলার প্রকৃত আসামি হাছিনা আক্তার নন।
এরপর ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত জজ শরীফুল আলম ভুঁঞা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেলসুপারকে আসামির ২০১৭ সালের বালামের সাথে ২০১৯ সালের বালাম বালাম যাচাই করে দুটি বালামে আসামির ছবির মিল আছে কি না জানিয়ে ৫ মে’র মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রাম ৫ম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের রায়ে ২০১৯ সালের ১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসমাইল হাজি বাড়ির হামিদ হোসেন ও তার স্ত্রী হাছিনা আক্তারের (২৬) স্ত্রীর এক মাদক মামলায় ৬ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন।
২০১৭ সালে মামলার পর হাছিনা কারাগারে থাকলেও জামিন পাওয়ার পর স্বামী স্ত্রী দুজনই পলাতক হয়ে যান। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাজা পরোয়ানামূলে টেকনাফ পুলিশ গ্রেপ্তার করে হামিদ হোছনের স্ত্রী হাসিনা বেগমকে (৪০)। সেই থেকে এখনো পর্যন্ত হাছিনা বেগম কোন মামলার আসামি না হয়েও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হাছিনা আক্তারের স্থলে সাজাভোগ করছেন।
নিরীহ হাছিনা টেকনাফ উপজেলার চৌধুরী পাড়ার হামিদ হোছনের স্ত্রী। তিনি টেকনাফ পৌরসভায় পান বিক্রি করে দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জীবন-যাপন করছিলেন।
সর্বশেষ এডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদ এবছর মার্চে হাছিনার পক্ষে আবেদন করেন। আদালত ৬ এপ্রিলের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেন। টেকনাফ পুলিশ গতকাল ২ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে জানান, গ্রেপ্তার হাছিনা আর মামলার আসামি হাছিনা আক্তার এক ব্যক্তি নন।
এডভোকেট মুরাদ বলেন, প্রতিবেদনটি গতকাল দাখিল করলেও তাতে ৬ এপ্রিল ২১ লেখা রয়েছে। প্রতিবেদনের ওপরে ডানপাশে তারিখে আবার ঘষামাজাও করা হয়েছে। এ হাছিনা আসল আসামি কি না তা যাচাই করতে পুলিশের সময় লেগেছে ৬ মাসেরও বেশি। আমরা হাছিনার মুক্তির চেয়ে আদালতে দরখাস্ত দাখিল করেছি।
হাছিনার ছেলে শামীম নেওয়াজ (১৪) বলেন, আমার মাকে থানায় একটি সাইন দিতে হবে বলে পুলিশ ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে আমার মাকে ইয়াবার মামলায় জেলে দেয়া হয়। আমার মায়ের কখনও কোন মামলা বা জিডি ছিল না, কখনো কক্সবাজার শহরেও যায়নি।
সেসময় আমার বোন রোকেয়ার বয়স ছিল দেড় বছর। আমার মা জেলে যাওয়ার পর আমার বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন কোথায় আছে জানি না।
এডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে অবশ্যই নাম ঠিকানাসহ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গ্রেপ্তার করবেন। যা আইনে এবং পুলিশ প্রবিধানেও সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে।
নিরীহ হাছিনা বেগমের গ্রেপ্তার হওয়া ওয়ারেন্ট তামিলকারী পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি। এব্যাপারে পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিতে পারেন। এছাড়া আদালতও এ ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যাবস্থার নির্দেশ দিতে পারেন।