প্রেমিকাকে হত্যা করে ডোবায় লাশ ফেললেন পুলিশ কনস্টেবল প্রেমিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২২ পিএম, ১৯ এপ্রিল,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:২৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজশাহীতে ডোবায় পড়ে থাকা ড্রামের ভেতর থেকে তরুণীর পায়ের কয়েকটি আঙুল বের হয়ে ছিল। এ দৃশ্য দেখে এক পথচারী পুলিশকে খবর দিয়েছিলেন। ঘটনার তিন দিনের মাথায় আঙুলের মাধ্যমেই তরুণীর পরিচয় মিলেছে।
রাজশাহীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সূত্রবিহীন এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে। খুনের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে এক পুলিশ সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নিহত তরুণীর নাম ননিকা রানী বর্মণ (২৩)। তাঁর বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদরের মিলনপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নৃপেন চন্দ্র বর্মণ। ননিকা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে সদ্য পাস করেছেন। তিনি একটি ক্লিনিকে নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পাশাপাশি নগরের পাঠানপাড়া এলাকার একটি মেসে থেকে চাকরির পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করছিলেন। ১৮ এপ্রিল রাতে তাঁর লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারকে (৪৩) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশে কর্মরত ছিলেন। নারী কেলেঙ্কারির কারণে তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামে।
বর্তমানে তিনি রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) রাজশাহী থানায় কর্মরত। রাজশাহী পিবিআইয়ের একটি দল গতকাল রোববার ভোররাতে নাটোরের লালপুরে বোনের বাড়ি থেকে নিমাইকে গ্রেপ্তার করে।
নগরের শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, হত্যাকাণ্ডটি সূত্রহীন ছিল। তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পিবিআই তাঁর আঙুলের ছাপ নেয়। আঙুলের ছাপ থেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকে তাঁর ঠিকানা বের করে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। আর পুলিশ ননিকার হত্যাকারী হিসেবে নিমাইকে শনাক্ত করে।
তাঁকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সহযোগী হিসেবে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়ার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার সুমন আলী (৩৪) এবং মাইক্রোবাসের চালক নগরের বিলশিমলা এলাকার আবদুর রহমানকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়। যে মাইক্রোবাসে লাশ নিয়ে গিয়ে ফেলে দেওয়া হয়, সেটিও জব্দ করা হয়েছে।
কনস্টেবল নিমাই তরুণীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ছয় থেকে সাত বছর ধরে ননিকা রানীর সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক। সম্প্রতি তিনি বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ কারণে তাঁকে হত্যার পর লাশ ড্রামে ভরে মাইক্রোবাসে করে ফেলে দেওয়া হয়।
শাহমখদুম থানার ওসি আরও বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা সবাই পিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করবে।
পুলিশ জানায়, নগরের তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাড়িতে ননিকাকে হত্যা করা হয়। বাড়িটি নিমাই চন্দ্র ৬ এপ্রিল ভাড়া নেন। তাঁর স্ত্রীও পুলিশ কনস্টেবল। তিনি বগুড়ায় কর্মরত। কনস্টেবল নিমাই তরুণীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
পুলিশ জানায়, ড্রামটি পড়ে ছিল রাজশাহী নগরের সিটিহাট এলাকার একটি ডোবায়। ১৬ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে একজন পথচারী ড্রামের মুখে একটি পা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ড্রামের ভেতর থেকে তরুণীর লাশটি উদ্ধার করে। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতের পর লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় শাহমখদুম থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।