সালথা তাণ্ডবের নায়ক সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ধরাছোঁয়ার বাইরে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫১ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
গত ৫ এপ্রিল, সোমবার রাতে ফরিদপুররের সালথায় সহিংসতার যে নজিরবিহীন তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে তার অন্যতম আসামী ও মূল নেপথ্য নায়ক কথিত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ইমারত হোসেন পিকুল মোল্যা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তাণ্ডবের ঘটনায় তাকে আসামী করা হলেও তিনি প্রতিদিন ফেসবুকে উপজেলা প্রশাসন নিয়ে নানা ধরণের উস্কানিমূলক পোষ্ট দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুজে পাচ্ছে না। এতে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত পিকুলকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে এ ঘটনার নেপথ্যে একটি নামই বারবার উঠে এসেছে। তিনি হলেন সালথা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুল। তবে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ বছেলেন পিকুলের ওই কমিটি ভুয়া।
সালথায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়নি। সে ভুয়া পরিচয় দিয়ে চলছে। এব্যাপারা আমরা সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। খোজ নিয়ে জানায়, পিকুলের বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও সরকারি জমি দখল করে এলাকায় আলোচিত হয়েছেন।
ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৫ জানুয়ারী তারিখে সালথা বাজারের গুরুত্বপর্ণ স্থানে সরকারি জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে উপজেলা প্রশাসনের উপর ক্ষুব্ধ হন স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুল। এ ছাড়া পিকুলের ভাই এনায়েতের দখলে থাকার সরকারি জমি উদ্ধার করে প্রশাসন।
এ ঘটনায় পিকুল ও তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হন। তার ক্ষোভ বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে ও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করেছিল। ওই ক্ষোভের কারনে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই জনতার ক্ষোভের তিলকে মদদ ও রসদ দিয়ে তাল বানাতে সাহায্য করেছে তিনি ও তার অনুসারীরা।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ফুকরা বাজারসহ সালথার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে জানা যায় এ সম্পর্কিত নানা তথ্য।
ঘটনার সুত্রপাত যে এলাকায় সেখানে গেলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ৫ এপ্রিল সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে ফুকরা বাজারে করোনার লকডাউনের কার্যকারিতা পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে উপজেলা সহাকারী কমিশনারের সাথে স্থানীয়দের ঝামেলা হয়। এ সময় ফুকরা বাজারে নটখোলা, তেলী সালথা ও গোপালিয়া গ্রামের তিন থেকে চার শতাধিক লোক জড়ো হয়। এদের মধ্যে থেকে কয়েক জন তরুণ সালথা থানা ঘেরাও করার ঘোষণা দেয়।
এ সময় তাদের মধ্যে থেকে কয়েকজন ব্যক্তি আশাপাশের কয়েকটি গ্রামের আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের ফোন করে গুজব ছড়িয়ে সালথা থানা ঘেরাও করতে আসতে বলেন। বিক্ষুব্ধ মিছিলকারীরা সালথা উপজেলা সদরে পৌঁছে উপজেলা কমপ্লেক্স ও থানা হতে আনুমানিক ১২০ গজ দূরে সালথা কলেজ রোডের সামনে অবস্থান নেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে থানা ও উপজেলার আশাপাশে বসবাসরত একাধিক ব্যাক্তি জানান, এই সুযোগে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুলের হাতুড়ি বাহিনী নামে পরিচিত ৫০-৬০ জনের একটি দল প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরণের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করে এবং এক পর্যায়ে ভূমি অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
পরে তারা এগিয়ে এসে কলেজ সড়কের সামনে অবস্থানকারী বিক্ষুব্ধ জনতাকে উত্তেজিত করে তাদের নিয়ে উপজেলা কমপ্লেক্স ও থানা ঘেরাও করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েক হাজার মানুষ এসে উপজেলা পরিষদ ও থানার চারদিকে যখন অবস্থান নেয়। এসময় পিকুলের হাতুড়ি বাহিনীর সদস্যরা উত্তেজিত জনতার মাঝে গিয়ে বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র সরবারহ করে।
এ সময় পিকুল বাহিনীকে অস্ত্র সরবারহ করতে দেখে স্থানীয় সালথা বাজার এলাকার মুরব্বীরা তাদের বাধা দেন। তবে এ বাধা উপেক্ষা করে হাতুড়ি বাহিনীর লোকজন হামলায় অংশ নেয়। তারা অংশ নেওয়ার পরেই মূলত সরকারি অফিস ও স্থাপনায় হামলা শুরু হয়। হামলা চলাকালে পিকুলের কয়েক সমর্থক সরাসরি ফেসবুক লাইভে এসে ক্রমাগত উস্কানিমুলক কথাবার্তা বলে সকলকে উত্তেজিত করেন এবং আশেপাশের গ্রামের লোকদের এ কাজে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা পরিষদের পশ্চিমে স্বেচ্ছাসেকলীগ সভাপতি ইমারত হোসেন পিকুলের বাড়ি হওয়ার সদরের রাজনীতিতে তার অনেক আধিপত্য রয়েছে। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পাশের থাকা এ নেতা ও তাদের সমর্থকরা যদি এই হামলায় ইন্ধন না দিত কিংবা অংশ না নিতো তাহলে হামলকারীরা এভাবে হামলা করে নির্বিঘ্নে বেরিয়ে যেতে পারতো না। হামলাকারীরা ইন্ধন পেয়েই উৎসাহ নিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
এই ঘটনায় অংশ নেওয়া হাজার হাজার মানুষের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতপন্থীদের আধিক্য থাকলেও তাদের উস্কে দেবার নেপথ্যে ছিল পিকুল।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ইমারত হোসেন পিকুল বলেন, তিনি এই হামলার সঙ্গে যুক্ত নন বরং তিনি তার এলাকা রামকান্তপুরের উত্তেজিত জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। তবে তিনি (ইমারত হোসেন) অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয় প্রশাসনের সাথে অসন্তোষ ও ফেসবুকে তার বিরূপ মন্তব্যের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি ইউএনওর-এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাদের দুর্নীতি নিয়ে ফেসবুকে লেখা-লেখি করেছি বিধায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আমি এ ঘটনায় কোনোভাবেই জড়িত না।
পিকুলের বিষয় সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: হাসিব সরকার বলেন, তাণ্ডবের ঘটনার (ভূমি অফিস ভাঙচুর) মামলায় পিকুল মোল্যা আসামী হয়েছে। তিনি আসামী হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রসাশনকে নিয়ে ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করছে। এগুলো আমরা দেখেছি। এ বিষয় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (সালথা-নগরকান্দা সার্কেল) মো: সুমিনুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পিকুলকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে। খুব দ্রুতই তাকে গ্রেফতার করা হবে।