চম্পা হত্যার তিন মাসেও বিচার পাইনি অসহায় বাবা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১২ পিএম, ৬ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৮ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মেয়ে হত্যার ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও বিচার পাননি অসহায় বাবা। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে নিহত চম্পার বাবা শেখ আলেক।
জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের পাটগ্রামের কুব্বাত শেখের ছেলে মোস্তফার সাথে আড়াই বছর আগে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় চম্পার। নিহত গৃহবধূ চম্পার দেড় বছরের একটি কন্যাশিশু রয়েছে।
বিয়ের পর থেকে নিহতের স্বামী-শশুর বিভিন্ন সময় যৌতুক দাবী করে। মেয়ের সংসার সুখের জন্য নিহতের বাবা আলেক বিয়ের সময় নগদ দুই লক্ষ টাকা ও স্বর্নালংকার দেন। এর পরও স্বামীর অত্যাচার থেকে মেয়েকে সুখে রাখতে নিজের পালের দুটি ষাড় গরু মেয়ের জামাই মোস্তফাকে দিয়ে দেয়।
এরপরও নিষ্ঠুর স্বামী আরো পাঁচ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে চম্পাকে অত্যাচার করতে থাকে। বাবার কাছ থেকে স্বামীর চাহিদা অনুযায়ী যৌতুকের টাকা এনে দিতে না পারায় নিহত চম্পা স্বামীর হাতে অত্যাচারিত হয়ে একাধিকবার বাবার বাড়ি চলে যায়।
গ্রাম্য শালিসীর মাধ্যমে পুনরায় চম্পার বাবা মেয়ের সুখের জন্য এক লক্ষ টাকা দিয়ে স্বামীর বাড়ী পাঠায়। এরপর মোস্তফা ব্যবসার জন্য চম্পার শশুর, খালু শশুর ও খালা শাশুড়ী আবারো চম্পার পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবী করে।
চম্পা তার বাবাকে কান্না বিজড়িত কন্ঠে মুঠোফোনে টাকা দিতে বলে। টাকা না পাইলে আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। অসহায় বাবা আলেক টাকা দিতে না পারায় চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাতে স্বামী মোস্তফা গৃহবধূ চম্পাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভোরে ঘোড়ার গাড়ি করে নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়ীতে লাশ পাঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় নিষ্ঠুর মোস্তফা।
এরপর থানা পুলিশ ময়না তদন্তের জন্য বিকেল তিনটার সময় নিহত চম্পার লাশ জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এলাকাবাসী জানান, নিহত গৃহবধূ চম্পাকে মৃত অবস্থায় ভোরে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তার স্বামী। চম্পা হত্যার তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন মামলা নেয়নি হরিরামপুর থানা পুলিশ। এখন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হত্যাকারীরা।
নিহত গৃহবধূ চম্পার বাবা শেখ আলেক বলেন, প্রায় আড়াই বছর আগে আমার পাশের গ্রামের পাটগ্রামের কুব্বাত আলীর ছেলে মোস্তফার সাথে পারিবারিক ভাবে আমার মেয়ে চম্পাকে বিয়ে দেই। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে নগদ দুই লক্ষ টাকা দেই। সাথে তিন ভরি স্বর্নালংকার দেওয়া হলেও মাঝে মধ্যে মেয়ের জামাই মোস্তফা আরো টাকার জন্য আমার মেয়েকে চাপ সৃষ্টি করে মারপিট করতো। হত্যা করার কয়েক দিন আগে পাঁচ লক্ষ টাকা দাবী করে আমার মেয়ে চম্পাকে চাপ সৃষ্টি করে। আমি টাকা না দিলে ওরা আমার মেয়েকে হত্যা করবে বলে আমার মেয়ে চম্পা আমাকে ফোন করে টাকা চায়। আমি টাকা দিতে না পারায় ওরা আমার মেয়ে চম্পাকে হত্যা করে আমার বাড়িতে দিয়ে যায়। আমার মেয়ে চম্পার লাশ ময়না তদন্ত করার জন্য হরিরামপুর থানায় সকাল থেকে ফোন করতে করতে থানা পুলিশ বিকেল তিনটার সময় এসে লাশ ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায় এস আই জালাল হোসেন। এরপর মেয়ে চম্পার লাশ দাফন শেষে আমি থানায় হত্যা মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ আমার মামলা না নিয়ে আমাকে উল্টো হুমকি দিয়ে থানা থেকে বের করে দেয়। এস আই জালাল আমাকে হুমকি দিয়ে বলে তুই যদি কোর্টে মামলা করিস তাহলে তোর মামলা আমি খেয়ে ফেলব।
এরপর আমি বাদি হয়ে মানিকগঞ্জ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৮নং আদালতে মামলা করি। সি আর মামলা নং-১৮(হরি)২০২১। আদালত সংশ্লিষ্ট থানায় এই মর্মে কোন মামলা রুজু হয়েছে কিনা তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য আদেশ দেন।
লেছড়াগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ হোসেন ঈমাম(সোনা মিয়া) বলেন, হত্যা না আত্মহত্যা তা আমি জানিনা। ঘটনার দিন নিহত চম্পার পরিবারের পক্ষ থেকে ফোন করা হয়। সেদিন দুপুরে আমি ও ওসি সাহেব একটা প্রোগ্রামে ছিলাম। সেখান থেকে ওসিকে বলে লাশ ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেছিলাম। আমি ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচারের দাবি করছি।
হরিরামপুর থানায় কর্মরত এস আই জালাল হোসেন বলেন, চম্পার মৃত্যুর সংবাদ শুনে ঘটনাস্থলে যাই। লাশ ময়না তদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠাই। আমি শেখ আলেককে কোন রকমের হুমকি ধামকি দেইনি। বরং আমি আলেককে সান্তনা দিয়েছি।
এ্যাডভোকেট আজিজুল হক অপু বলেন, শেখ আলেকের বাদী হয়ে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পেনাল কোড ৩০২/ ৫০৬(।।)/৩৪ ধারায় মামলা রুজু করেন। যার প্রেক্ষিতে আদালত হরিরামপুর থানায় এই মর্মে কোন মামলা হয়েছে কিনা তার যাচাই বাছাইয়ের জন্য আদেশ দেন।
এবিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুঈদ চৌধুরী বলেন, আমার কাছে কেউ হত্যা মামলা করার জন্য আসেনি। আদালত থেকে একটি আদেশ আসে। সেই আদেশ অনুযায়ী আদালতে একটি অপমৃত্যুর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।