কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলে শতাধিক মাল্টিপারপাসের ফাঁদে সাধারণ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩৫ পিএম, ২৪ মার্চ,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:১৭ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলে লাকসাম, বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার কয়েক হাজার গ্রাহকের কয়েকশ কোটি টাকা আত্নসাৎ করে শতাধিক মাল্টিপারপাসের কর্মকর্তারা উধাও হয়ে পড়েছে।
সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ৫টি উপজেলার বিভিন্নস্থানে যত্রতত্র ভাবে গজিয়ে উঠা মাল্টিপারপাস কর্মকর্তাদের বিপুল অর্থ আত্নসাতের ফলে কয়েক হাজার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর কোন সরকারী কিংবা বে-সরকারী পরিসংখ্যানে ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহক কিংবা বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা নিরুপন করা আজও সম্ভব হয়নি।
এ অঞ্চলে সমবায় সমিতি পরিচালনায় সরকারী নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে জেলা-উপজেলা সমবায় অফিসার- জেলা নিবন্ধকসহ কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ওইসব লাপাত্তা মাল্টিপারপাসগুলোর সাথে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত।
ওইসব মাল্টিপারপাসে বিনিয়োগকারী হাজার হাজার গ্রাহক যখন প্রতিনিয়ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা মাল্টিপারপাসের শাখা অফিসে হন্যে হয়ে ঘুরছেন, বেশ কিছু আর্থিক সমবায় প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা তাদের নিজস্ব অর্থ দিয়ে মাল্টিপারপাসের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বিভিন্ন বিনিয়োগের নামে লোভনীয় অফারে এধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে আসছিল। কিন্তু মাল্টিপারপাস নামক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর বৈধ কোন কাগজপত্র নেই।
এসব কিছুর মনিটরিংয়ে জেলা নিবন্ধক-জেলা- উপজেলা সমবায় অফিসারের দায়িত্ব অতি মূখ্য হলেও রহস্যজনক কারনে তারা নিরব দর্শক।
সূত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চল ৫টি উপজেলা জুড়ে ঐসব অবৈধ অর্থ লেনদেনকারী মাল্টিপারপাসগুলো অজ্ঞাত কারণে বিনিয়োগকারী হাজার হাজার গ্রাহকের আমানতকৃত টাকার লভ্যাংশ দেয়া বন্ধ করে দিলে উপজেলাগুলো জুড়ে শুরু হয় ব্যাপক তোলপাড়। ঐসব বিনিয়োগকারী গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা না দিয়ে ৫টি উপজেলার বড় বড় মাল্টিপারপাস প্রতিষ্ঠান নামে শতাধিক প্রতিষ্ঠান অফিস বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
এদিকে বড় প্রতিষ্ঠান গুলোর মাঝে এফআইসিএল, সেবা হাউজিং, প্রিভেইল গ্রুপ, শাহজালাল মাল্টিপারপাস, আরসিএল, পদ্মা মাল্টিপারপাস, যমুনা, পায়রা, বসুন্ধরা, জনকল্যান, আলোড়ন মাল্টিপারপাস ও পপুলার গ্রুপ বন্ধ করে বিনিয়োগ ও আমানতকারী গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকগণ এখন বিপাকে এবং আমানত সংগ্রহকারী পরিচালক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে থানা এবং আদালতে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগীদের একাধিক সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালী গ্রাহকরা কোনো কোনো মাল্টিপারপাসের অধীনে থাকা বাড়ী, জায়গা, পরিবহন ও প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক ঋণ গ্রহিতাদের বন্টক সমন্বয় ও অফিস দখল করে তাদের সম্পদ কিংবা জমাকৃত বিনিয়োগের টাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিফল হয়েছেন ঐসব চক্রের সদস্যরা।
অপরদিকে ওই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও গ্রাহকদের জমা রাখা ডিড ডকুমেন্ট স্ট্যাম্প ও চেক দিয়ে প্রতারনার মাধ্যমে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলেও বিনিয়োগকারীদের টাকার কোন সুরাহা হচ্ছে না। প্রতিনিয়ত ওই চক্রের হাতে গ্রাহকরা হামলা-মামলা ও হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা রাজনৈতিক ভাবে চাপে আছি। ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও কোন কাজ করতে পারছি না। ইতিমধ্যে উপজেলা গুলোতে বন্ধ হওয়া অভিযুক্ত মাল্টিপারপাস গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে পত্র দেওয়া হয়েছে, প্রশাসনিক সহযোগীতা না পাওয়ায় ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে না।