ওসির কক্ষে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য ‘লাইভ’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৫ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৩ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সুনামগঞ্জের ছাতকে একটি হত্যা মামলার আসামিকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ‘লাইভে’ প্রচারের ঘটনা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ছাতক থানার ওসি নাজিমউদ্দিনের কক্ষে গ্রেপ্তার আসামি আবু সুফিয়ান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ‘লাইভ’ করা হয়।
পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের দৃশ্য লাইভে প্রচার করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ‘ছাতক টু সুনামগঞ্জ’ পেজটি থেকে লাইভের এক ঘণ্টা পর ভিডিওটি সরিয়ে ফেলা হয়। এর মধ্যেই ৫ হাজারের বেশি মানুষ ভিডিওটি দেখেন এবং সমালোচনা করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ঘটনা প্রচার পেলে ওই অঞ্চলের পুলিশের মধ্যেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়।
ছাতক থানার ওসির কক্ষে আসামি সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওসি নাজিমউদ্দিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং একজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে অবশ্য সেই চেয়ারম্যানের বক্তব্য জানা যায়নি।
ওসি নাজিমউদ্দিন জানান, ‘কে বা কারা গোপনে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে প্রচার করেছে তাদের খুঁজে বের করা হবে।’ গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের মোল্লাআতা গ্রামের জহির আলীর ছেলে ব্যবসায়ী আখলাকুর রহমান আখলাদ (৩৫) খুন হওয়ার ঘটনায় সোহাগ নামের ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, বিষয়টি তদন্তে কমিটি করার কথা জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি শুক্রবার বিকেলে ঘটনাটি অবগত হয়েছি। শনিবার এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেব। কোনোভাবেই এভাবে গ্রেপ্তার আসামির জবানবন্দি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের সুযোগ নেই।’
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান আহমদ সেলিম বলেন, ‘শুধু এই ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড নয়, কোনো মামলার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ, রিমাণ্ড, জবানবন্দি প্রকাশ্যে বা অনলাইনে লাইভে প্রচারের কোনো সুযোগ নেই। যারা এই কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর রাতে আখলাদ গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে বাড়িতে যাওয়ার পথে খুন হন। গ্রামের পাশে ধানি জমিতে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় গোবিন্দনগর গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে আবু সুফিয়ান সোহাগ ও বিশ্বনাথ উপজেলার দিঘলী-চাকলপাড়া গ্রামের আশরাফুল আলমের ছেলে আলীম উদ্দিনকে গত বুধবার রাতে আটক করে পুলিশ।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে এ মামলায় আবু সুফিয়ান সোহাগকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ‘স্বীকার করেছেন’ দাবি করে ওসি জানান, তারা আদালতেও জবানবন্দি দিয়েছেন। হত্যার ঘটনায় জড়িত পরিকল্পনাকারীসহ অন্যদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।