২২ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৬ এএম, ৫ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২২ | আপডেট: ০৩:৪০ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে ন্যস্ত থাকবে। কিন্তু বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সেই ক্ষমতা অর্পিত রয়েছে ২২ জন ভারপ্রাপ্ত প্রধানের ওপর। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের ‘হৃৎপিন্ড’ বলা হলেও জাবির রেজিস্ট্রার কার্যালয়টি প্রায় চার বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান দিয়ে চলছে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত হিসেবে গত বছরের ৩০ অক্টোবর চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও সেশন বেনিফিটের কারণ দেখিয়ে এখনও নিজ কর্মস্থলে কাজ করে যাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ।
বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের-১২ এর ৬ ধারা অনুযায়ী, ‘ভিসি প্রয়োজনে প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ বাদে সব পদে অনধিক ছয় মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে পারেন। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি পদে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের ছয় মাসের মেয়াদ অনেক আগে পার হলেও স্বপদে বহাল রয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের লঙ্ঘন হলেও নির্বিকার প্রশাসন।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রশাসনকে নিজের অনুগত রাখতে কাউকে পূর্ণ ক্ষমতা না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে দফতরগুলো চালিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রক্টর ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের প্রাধ্যক্ষ আ স ম ফিরোজ উল হাসান, কম্পট্রোলার মো. মোসানুল কবীর, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আকবার হোসেন, বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন নীলাঞ্জন সাহা, আইন অনুষদের ডিন তাপস কুমার দাস, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ নজরুল ইসলাম, আল বেরুনি হলের প্রাধ্যক্ষ মো. আশরাফুল আলম, মাওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল হাসান, প্রকৌশল অফিসের প্রধান আবদুস সালাম মো. শরীফ, চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. শামসুর রহমান, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অফিসের পরিচালক নাসির উদ্দিন, জনসংযোগ অফিসের পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, শারীরিক শিক্ষা অফিসের পরিচালক বেগম নাছরীন, গ্রন্থাগার শিক্ষক অধ্যাপক মুহম্মদ হানিফ আলী ও অতিরিক্ত শিক্ষক অধ্যাপক এ শামীম কায়সার, বিজ্ঞান কারখানার শিক্ষক অধ্যাপক মো. সালাহউদ্দিন, পরিবহন অফিসের শিক্ষক অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার ও অতিরিক্ত শিক্ষক অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী, আইসিটি সেলের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন ও অতিরিক্ত শিক্ষক অধ্যাপক মো. গোলাম মোয়াজ্জাম ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা, প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা, শিক্ষা কর্মসূচিগুলো ঠিকমতো না চলার প্রমাণ ভারপ্রাপ্ত দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো। এতে বিপদগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কাঠামো। অনুষদগুলোতে নির্বাচিত ডিন থাকলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি থাকতো। কিন্তু সাবেক ভিসি নির্বাচন ভয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নিজের পছন্দমতো লোক বসিয়েছেন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে বন্ধ করে নিজের অনুগত লোক দিয়ে প্রভাব রাখার চেষ্টা করেছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নির্বাচন হলেও করোনার অজুহাতে আমাদের এখানে বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভিসির পদটিও এখন অস্থায়ী। গুরুত্বপূর্ণ এই পদে প্রায় এক মাসের মতো স্থায়ী প্রধান নেই। সরকারকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত দেয়া উচিত। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে সিনেটে ভিসি প্যানেল নির্বাচন খুবই জরুরি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদটিও বর্তমানে অস্থায়ী। গত ২ মার্চ সাবেক ভিসির দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলমকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক অফিস আদেশে ভিসির রুটিন দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু অফিস আদেশে রুটিন দায়িত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা না থাকায় ভিসির প্রশাসনিক কাজে নেমে এসেছে স্থবিরতা। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সনদপত্র উত্তোলন করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা, হচ্ছে না নিয়মিত অ্যাকাডেমিক ও সিন্ডিকেটসহ জরুরি সভাগুলো। এ বিষয়ে নুরুল আলম বলেন, ভিসির রুটিন দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে এখনও কোনও উত্তর না পাওয়ায় কী কী দায়িত্ব আমার এখতিয়ারভুক্ত তা সম্পর্কে নিশ্চিত নই।