ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আদালত বর্জন : আইনজীবী ছাড়াই চলছে বিচারপ্রার্থীদের শুনানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১০ পিএম, ৮ ফেব্রুয়ারী,
বুধবার,২০২৩ | আপডেট: ০৯:২৫ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আবারও আদালত বর্জন কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে বিচারাঙ্গনে। আইনজীবী ও বিচারকদের মধ্যে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে গত ৫ জানুয়ারি সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল আইনজীবী সমিতির নেতারা।
সম্প্রতি আইনমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা জজ আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ ছাড়া সব আদালতের বিচারিক কাজে অংশ নিচ্ছিলেন আইনজীবীরা। তবে গতকাল মঙ্গলবার ষষ্ঠ দফায় বাড়ানো দুই আদালত বর্জন কর্মসূচির শেষ দিনেও জেলা জজ শারমিন নিগার, নারী ও শিশু নির্যাতম দমন আদাল-১ এর বিচারক মো. ফারুক ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামকে অপসারণ করে নেওয়ার দাবি আদায় না হওয়ায় আইনজীবীরা আবারও সব আদালত বর্জনের ডাক দেয়।
আজ বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে কোনো আদালতের বিচারিক কাজেই অংশ নেননি তারা। এদিকে আদালতে স্বাভাবিক বিচারিক কাজ বিঘ্নিত হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। দীর্ঘদিন নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালতে শুনানিতে আইনজীবীরা অংশ না করার পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপ্রার্থীরা নিজেই আদালতের শুনানি করছেন।
বুধবার এই আদালতে দুটি মামলা নিস্পত্তি হয়েছে বিচারপ্রার্থীদের শুনানিতেই। দুটি মামলা উভয়পক্ষের সম্মতিতে সম্পূর্ণ নিস্পত্তি হয়ে যায়। এর মধ্যে বাদী মদিনা বেগম তার প্রতিবেশী খায়ের মিয়ার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নেন। অপরটি ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট দায়ের করা সেতু আক্তার নামে এক নারী তার স্বামী তারেকের বিরুদ্ধে যৌতুক চাওয়ার অভিযোগে করা মামলা তুলে নেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল আদালত সূত্রে জানা যায়, আইনজীবীরা গত ১ জানুয়ারি থেকে নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে শুনানি বর্জন করে আসছেন। এতে করে গড়ে অসংখ্য মামলা শুনানি ব্যাহত হয়। গত ২২ কার্য দিবসে প্রায় ২ হাজার মামলার শুনানি ব্যাহত হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপ্রার্থীরা নিজেরাই গতকাল মঙ্গলবার আদালতের শুনানিতে অংশ নেন। মঙ্গলবার ৫৭টি মামলা ধার্য দিন ছিল। এর মধ্যে দুটি মামলায় আসামিরা জামিন পেয়েছেন। বুধবার ৬৩টি মামলার শুনানি ধার্য ছিল। এর মধ্যে দুটি মামলা উভয়পক্ষের সম্মতিতে সম্পূর্ণ নিস্পত্তি হয়ে যায়।
এদিকে, সকাল ১০টার দিকে নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের ভারপ্রাপ্ত পেশকার মো. নিশাতকে আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা এজলাসে এসে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর ভূঞা বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা কথা। আমি আদালত চত্বরে ঘুরে এসেছি, কিন্তু ভেতরে যাইনি। আমাদের আন্দোলন চলমান আছে।’
নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘আইনে বলা আছে, কারও মামলা যদি নিজে পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে এতে কোনো বাধা নেই। নিজে মামলায় শুনানি করতে পারেন। আমরা নিজেদের কাজ করতে আসিনি। আমরা এসেছি আইনের কাজ করতে।
‘আদালতের এজলাসে আমি উঠতে বাধ্য। উচ্চ আদালতের নির্দেশ বা যদি কোনো আদেশে আমাকে বদলি করা না হয়। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমি বিব্রতকর অবস্থায় আছি।’
গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন।
এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। পরবর্তীতে দফায় দফায় ৭ কর্মদিবস আদালত বর্জনের কর্মসূচি পালন করেন আইনজীবীরা।
এ ছাড়া বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও অশালীন স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দুই দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বৈঠকের পর দুটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।