ইবিতে র্যাগিংকান্ডে হাতেনাতে ধরা, অভিযুক্তদের থানায় সোপর্দ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ০২:২৭ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে র্যাগিং চলা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা হয়েছে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।
গতকাল সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এসময় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।
অভিুযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন, শেয়ান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল এবং ল এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।
ভুক্তোভোগীরা জানান, সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ভুক্তভোগীদের ডাকে অভিযুক্ত সিনিয়র শেহান। পরে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নং রুমে যেতে বলেন অভিযুক্তরা। অতঃপর ভুক্তভোগী সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ৩৩০ নং রুমে যায়। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের এসাইনমেন্ট লেখা লাগবে বললে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে অভিযুক্ত সাব্বির ও সঞ্চয়।
এসময় ভুক্তভোগীদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, আরেকজনকে কল দিয়ে বাজে ভাষা বলতে বলা হয় এবং আরেকজনে নাচতে বলা হয়৷ এসময় হলের সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করেন।
এর আগে, গত ১৬ নভেম্বর রাত ১১টার দিকে নবীন ব্যাচের ১২জন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী এন্ড হাদী ছাত্রাবাসে ডাকেন অভিযুক্তরা৷ পরে সেখানে রাত আড়াই টা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় তাদের৷ এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ সিনেমার তারকাদের নাম জিগ্যেস করা হয়। কেউকে পর্ণ তারকা সেজে অভিনয়ও করতে বলা হয়। এছাড়া তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয় এবং নানারকম হুমকিও দেয়া হয়।
এসময় উপস্থিত অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শফিউল্লাহ, তরিকুল, মুকুল, সাব্বির, সাকিব, শেহান, কান্ত বড়ুয়া এবং জিহাদ।
এদিকে র্যাগিং চলা অবস্থায় অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরা হলটির সিনিয়র শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, আমার কাছে অভিযোগ আসে হলের ৩৩০ নং রুমে র্যাগিং চলছে। অতঃপর আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্চয় দুজন মিলে ওদেরকে র্যাগ দিচ্ছে। পরে ঘটনা জিগ্যেস করলে তারা অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তখন ভুক্তভোগীরা র্যাগিং চলছিলো এটা নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশী হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, আমি হলের কক্ষে ছিলাম না। পরে আমাকে ডাকা হয়। এসময় ভিতরে গিয়ে বান্না ভাইয়ের দেখতে পাই৷ এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সাথে আমরা বসেছিলাম। ওই দিন ভিসি, প্রক্টর স্যারের নামসহ, বিভাগের সকল শিক্ষকের নাম জিগ্যেস করা হয়। এসময় কেউ না পারলে তাকে একটু ধমকও দেওয়া হয়। তবে এসময় কারো মারধর বা শারীরিক নির্যাতন করা হয় নি। তবে বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান তিনি৷
এ বিষয়ে ইবি থানার ডিউটি অফিসার এস আই মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে এসেছে। পরে তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।