গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবেই গণবিরোধী ঘটনা ঘটছে - বিএনপি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৩ এএম, ২০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৪৪ এএম, ৯ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবেই এই সব গণবিরোধী ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপি। ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, এই গণবিরোধী সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই পুলিশ এখন যখন তখন গুলি করে মানুষ হত্যা করছে যা কোনো মতেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয়। গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবেই এই সব গণবিরোধী ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে নিহত শ্রমিক ভাইয়ের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় এবং এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়। শনিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
আজ সোমবার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দফতরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সভায় আলোচ্য নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়:
১। সভায় বিগত ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায় দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সদস্যবৃন্দকে অবহিত করেন। সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগ মুক্তি কামনা করা হয়।
৩। সভায় বর্তমান বৈশি^ক মহামারি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের ভয়াবহ আকারে সংক্রমণ এবং মানুষের মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ইতিমধ্যে এই ভাইরাসে সংক্রমিত যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের জন্য শোক প্রকাশ এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের রোগ মুক্তির জন্য কামনা করা হয়।
সভায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সভা মনে করে এই অনির্বাচিত সরকারের সীমাহীন অবহেলা, অযোগ্যতা, ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুর্নীতির কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সময়োচিত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞবৃন্দ এবং সরকারের গঠন করা জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শকে উপেক্ষা করে লকডাউন ঘোষণা বিলম্ব করা, লকডাউন ঘোষণা করার পরেও কার্যকর করতে না পারা, অন্যদিকে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত বেড, আইসিইউ, অক্সিজেন সরবরাহ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা না করার কারণে সংক্রমিত রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে সরকারের কোনো পর্যায়ে কোনো জবাবদিহিতার ব্যবস্থা না থাকা এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের অবাধ দুর্নীতির কারণে পরিস্থিতি এখন মারাত্মকভাবে মানুষের জীবনের প্রতি হুমকি এবং জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
করোনার টিকা সংগ্রহ ও আমদানিতে বেসরকারি ব্যবসায়ীকে সম্পৃক্ত করার কারণে এবং সুপরিকল্পিত কোনো কৌশল না থাকার কারণে আজ টিকা প্রাপ্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ৩ কোটি টাকার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটকে বেসরকারি আমদানিকারকের মাধ্যমে আগাম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারত টিকা রফতানি বন্ধ করাতে বাংলাদেশের মূল্য পরিশোধিত টিকার প্রাপ্তি এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। প্রথম ডোজ টিকা যারা নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ টিকা তারা পাবেন কি না সে ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু ১৮ কোটি মানুষকে টিকা প্রদানের কোনো পরিকল্পনাও জনগণের কাছে কখনই স্পষ্ট করে বলা হয়নি। শুধুমাত্র চিহ্নিত ব্যবসায়ীকে আমদানি দায়িত্ব দিয়ে একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা আমদানির সিদ্ধান্ত দুর্নীতির কারণে করা হয়েছে বলে সভা মনে করে।
অপরদিকে লকডাউন ঘোষণার ফলে নি¤œ আয়ের মানুষ, দিন আনে দিন খায় মানুষ, শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী চরম সংকটে পড়ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে ২০২০ সালে এই সব মানুষের অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং সামগ্রিক অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য ৮৭ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্রস্তাব দেওয়া হয়ে ছিল। সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ তো করেনইনি উপরন্তু বিদ্রুপ করেছে। একই সঙ্গে সরকার ঘোষিত তথাকথিত প্রণোদনায় মালিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করেছে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়েছে। সব ধরনের শ্রমিকেরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। অর্থনীতি চরম সংকটে পড়েছে। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম মেগা প্রজেক্টগুলোর অর্থ ব্যয় আপাতত বন্ধ করে প্রান্তিক মানুষের জীবন রক্ষায় তাদের কাছে নগদ অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এবারেও লকডাউন ঘোষণার আগেই সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি ছিল।
সভায় অবিলম্বে টিকা আমদানি, বিতরণ এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বেড, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনাকালে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিকট নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান ও অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। সভায় দুর্নীতিতে জড়িত চিহ্নিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়। সভা মনে করে এই করোনাকালে মানুষের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের পদত্যাগ করা উচিত।
৪। সভায় মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ থেকে এই অনির্বাচিত দখলদারী সরকার ভিন্ন মত ও বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে যে ব্যাপক হারে গণ গ্রেফতার, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হয়রানী শুরু করেছে তার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। সভায় এই অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করা এবং এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠার চক্রান্তের অংশ বিশেষ হিসেবেই এই মিথ্যা মামলা ও গণ গ্রেফতার করা হচ্ছে। অবিলম্বে মিথ্যা মামলা, গণ গ্রেফতার বন্ধ এবং গ্রেফতার কৃত নেতা-কর্মীদের নিশর্ত মুক্তি প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।
৫। সভায় গত ১৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নির্মীয়মাণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত শ্রমিকদের ন্যয্য দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ফলে ৫ জন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানানো হয়। সভা মনে করে এই গণবিরোধী সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণেই পুলিশ এখন যখন তখন গুলি করে মানুষ হত্যা করছে যা কোনো মতেই একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয়। গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাবেই এই সব গণবিরোধী ঘটনা ঘটছে। অবিলম্বে নিহত শ্রমিক ভাইয়ের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয় এবং এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়।
৬। আলোচনা শেষে সভাপতি সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা মুলতবি করেন।