গরীবের অধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সুরক্ষিত না হওয়ায় সরকার পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে : শিমুল বিশ্বাস
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৯ পিএম, ৭ জানুয়ারী,মঙ্গলবার,২০২৫ | আপডেট: ০২:৪৮ পিএম, ৮ জানুয়ারী,
বুধবার,২০২৫
আমাদের দেশের সরকার প্রত্যক্ষভাবে গরীবের অধিকার রাষ্ট্রীয় ভাবে সুরক্ষিত করতে পারেনি বিধায় সরকার পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাসমুর রহমান শিমুল বিশ্বাস।
গতকাল সোমবার (০৬ জানুয়ারি) রাজধানীর বসুন্ধরায় ঢাকা মহনগরী ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়নের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, যে রাষ্ট্র বা সরকার বাঁচার মত করে গরীব মানুষের মজুরি নির্ধারন করে দিয়েছে, মৌলিক অধিকার নির্ধারন করে দিয়েছে, আর মানুষকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সন্মানিত করেছে, সেই রাষ্ট্র উন্নত রাষ্ট্র হয়েছে। আমেরিকা ইউরোপ জাপান অস্ট্রেলিয়া কানাডা দক্ষিণ কোরিয়া মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর সহ এই যে রাষ্ট্রগুলো উন্নতি লাভ করেছে-তাদের সেই উন্নতির পিছনের গল্প হলো তাদের রাষ্ট্র শ্রমজীবী মানুষের তিনটি অধিকার- শ্রমের ন্যায্য মজুরি রাষ্ট্র গ্যারান্টেড, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সন্মান ও মর্যাদা এবং রাষ্ট্রে বসবাসকারী সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে।
তিনি বলেন, পৃথিবীতে যে রাষ্ট্রগুলো এই তিনটি মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে, সেই রাষ্ট্রগুলো উন্নতি লাভ করেছে। তারা ধনী থেকে আরও ধনী রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে।
শিমুল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল এবং সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের ৯৭ জন নেতাকর্মীর তাজা রক্তে এই স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন ঘটেছে।
তিনি আরও বলেন, এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের আন্দোলনে যে সকল শ্রমিক জীবন দিয়েছে- সেই শহীদদের পরিবার এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রের কাছ থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায়নি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে দূর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের শতকরা ৯০ ভাগ শ্রমিকের পরিবারও কোন ক্ষতিপূরন পাননি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় এই শ্রমিক নেতা বলেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা লড়াই, '৭১ সালে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াই, '৯০ এর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি লড়াই আন্দোলন সংগ্রামে সবচেয়ে বেশী ত্যাগ স্বীকার করেছে শ্রমিক জনতা। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ৭০ ভাগ অর্থ উপার্জন করে আমাদের বিদেশে কর্মরত শ্রমিকসহ দেশের গার্মেন্টস শ্রমিক এবং চামড়া শিল্পের শ্রমিকরা।
প্রধান অতিথি উল্লেখ করেন, যাদের শ্রম ঘামে সভ্যতার চাকা সচল রয়েছে, দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে তাদের ন্যায্য অধিকার সুরক্ষা করতে হবে।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল হক দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, গত ১৭ বছরে আওয়ামী স্বৈরাচার সরকার যেভাবে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে; তার স্বাক্ষী কিন্তু আপনারা সকলেই। ১৭ বছরের নির্যাতনের ইতিহাস ভূলে যাবেন না, মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্তও ভূলে যাবেন না। পতিত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের নির্যাতনের যে করুণ যন্ত্রণা! এটা কিন্তু আমরা সকলেই ফেইস করেছি। আমাদের নামে মামলা হয়েছে, আমাদেরকে এরেস্ট করা হয়েছে,রিমান্ডে নেয়া হয়েছে, আমাদের গায়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। এই নির্যাতন কখনও ভূলে যাবার নয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের শাসনামলে সংবাদমাধ্যম গুলো দলীয় করণ করা হয়েছে। কোন নিউজ প্রচার করা যাবে এবং কোনটা যাবে না, তার পুরোটাই আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার নিয়ন্ত্রণ করেছে। একইভাবে বিচার বিভাগেরও একই অবস্হা। যারা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হামলার স্বীকার হয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাড়িয়েছেন,তখন আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকারের আজ্ঞাবহ জর্জ সাহেবদের চিরকুট ধরিয়ে দেয়া হতো।তাতে বলা হতো- কাকে রিমান্ডে নেয়া হবে,কাকে সাজা দেয়া হবে। এভাবেই সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে বিচার বিভাগ কাজ করেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য গত ১৭ বছর ছিল অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনক।
বিএনপি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে এদেশের জনগণ,বাংলাদেশ কোন পথে চলবে এবং কোন পথে যাবে,তার দিক নির্দেশনা এদেশের জনগণ দিবে বলে বক্তব্যে উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা আমিনুল হক।
ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিকদলের সদস্য সচিব ও ঢাকা মহানগরী ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান এর সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিকদলের সিনিয়র যুগ্মআহবায়ক ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লায়ন ফরিদ আহমেদ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রমিকদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ- শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ফিরোজউজ্জামান মামুন মোল্লা, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান চেয়ারম্যান, যুগ্ম আহবায়ক তুহিনূর ইসলাম তুহীন, শ্রমিকদল ঢাকা মহানগর উত্তর এর আহবায়ক কাজী শাহআলম রাজা, কেন্দ্রীয় শ্রমিকদলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম মনজু, ঢাকা মহানগর ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন ভাটারা থানা শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মৃধা, সাধারণ সম্পাদক ফারুক মোল্লা, সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম রব্বানী প্রমুখ।