টিকা প্রয়োগে ১৫ দিন অপেক্ষার আহ্বান ড. বিজনের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৮ এএম, ২২ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৪৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল মনে করেন, টিকা প্রয়োগে ১৫ দিন অপেক্ষা করা উচিত বাংলাদেশের। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা বলেন।
একই সঙ্গে ড. বিজন জানান, বাংলাদেশে কাজ করার জন্য যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া দরকার ছিল তিনি তা পেয়েছেন আজ বৃহস্পতিবার সকালে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে জমা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছেছে ভারতে প্রস্তুতকৃত ২০ লাখ ডোজ করোনার টিকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশে করোনাভাইরাসের টিকা পৌঁছেছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিকদের মধ্য থেকে ২০ থেকে ২৫ জনকে প্রথমে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মানানও এ কথা জানিয়েছেন। তবে আমি মনে করি, ভারতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। সেখানে এর ফলাফল কী আসে সেটি দেখার জন্য ১৫ দিন অপেক্ষা করা দরকার। দেশের মানুষও ভারতের ফলটা দেখতে পারে।”
প্রতিবেশী দেশটিতে এ টিকার প্রভাব ভালো হলে বাংলাদেশের মানুষের দুশ্চিন্তা চলে যাবে বলে তিনি মনে করেন।
বিজন বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ তো একই রকম। সুতরাং সেখানে যে ফল আসবে সেটা বাংলাদেশেও আশা করা যায়। অন্ততপক্ষে আরও ১৫ দিন দেখা উচিত। ভারতে ভ্যাকসিন দেয়ার পর যদি প্রতিক্রিয়া হয়, তাহলে এর মধ্যেই হয়ে যাবে। তখন মানুষের প্রশ্ন কম থাকবে।”
বিখ্যাত এ অণুজীববিজ্ঞানী বলেন, “বাংলাদেশে ভ্যাকসিন আসা মানেই তো দেয়া না। টিকা আসার পর সেটআপ করতেও তো সময় লাগবে। কাকে টিকা দেবে তাদের নির্বাচন করা, যারা টিকা দেবে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া- এসব করতে সপ্তাহ দুই সময় লেগে যাবে। দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারতের পরিস্থিতি বোঝা যাবে।”
সার্সভাইরাসের কিট উদ্ভাবক ও করোনাভাইরাস শনাক্তের ‘জি র্যাপিড ডট ব্লট’ কিট উদ্ভাবক মনে করেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্যবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা যদি ভারতের টিকা দেয়ার ফলাফলটা ভালো করে লক্ষ্য করেন বা তথ্য আদান প্রদান করেন, তাহলে তারা ভালো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারবেন।
মুক্তিযোদ্ধা, করোনা মোকাবিলায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখসারির কর্মী, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন জনগোষ্ঠী, বয়োজ্যেষ্ঠ জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী, শিক্ষাকর্মী ও গণ পরিবহনকর্মীদের আগে টিকা দেয়ার বিষয়টি ঠিকই আছে বলে মনে করেন ড. বিজন।
তিনি আরও বলেন, ফার্মাসিউটিক্যালসে যারা আছেন এবং গার্মেন্টসে আছে তাদেরও দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে, যদি সরকারের যথেষ্ট ভ্যাকসিন থাকে।
কিছুদিন আগে দেশে ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় সিঙ্গাপুরে চলে যেতে হয়েছিল ড. বিজনকে। পরবর্তীতে বেশ লম্বা সময় ধরে চলা প্রক্রিয়া আজ বৃহস্পতিবার শেষ হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারবেন।
বিজন জানান, ওয়ার্ক পারমিটের কাগজ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে তার কাছে পৌঁছেছে। বিজন আরও জানান, ওয়ার্ক পারমিটের ভিত্তিতে ভিসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করবেন। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাস তাকে ভিসা দিলে দেশে ফিরে তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কিট গবেষণার কাজে যোগ দেবেন। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে আরও এক মাসের মতো লাগতে পারে।
স্বাভাবিকভাবেই দেশে কাজের অনুমোদন পাওয়ায় খুবই আনন্দিত ড. বিজন কুমার শীল। তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে যখন তাকে চলে যেতে হয়েছিল, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তার। অবশ্য কারো প্রতি তার কোনো অভিযোগ ছিল না। এখন যখন সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, তিনি ফের জন্মভূমিতে ফিরবেন এবং আরও ভালো কিছু করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
ড. বিজন কুমার শীল গণবিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি কিট উদ্ভাবন করেছে।