পুরুষের তুলনায় নারীদের করোনা-ভীতি বেশি : গবেষণা
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০১:৩৯ এএম, ৬ জুলাই,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১০:৩৫ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনাভাইরাসে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে পুরুষের তুলনায় নারীরা করোনা-ভীতিতে বেশি ভুগছেন। করোনা-ভীতির কারণে ৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ বিষণ্মতায় ভুগছেন। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ পরিচালিত এক গবেষণা সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, মহামারিতে অন্যান্য পেশাজীবীর চেয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিষণ্মতায় ভুগছে বেশি। এছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা যোগ্যতাসম্পন্ন ও অধ্যয়নরত মানুষের মাঝেও বিষণ্মতা বেশি। গত ২৪ জুন ‘ফেয়ার অ্যান্ড ডিপ্রেসিভ সিমটমস এইমড কোভিড-১৯ : এ ক্রস সেকশনাল পাইলট স্টাডি অ্যামং এডাল্ট পপুলেশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের গবেষণাটি বিশ্বখ্যাত এলসেভিয়ারের হিলিয়ন নামের সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। সমীক্ষাটি পরিচালনায় অংশ নেন জাবির পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের তিন শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম, সাদিয়া সুলতানা ও আবিদ হাসান খান। তত্ত্বাবধান করেন একই বিভাগের প্রভাষক সাহাদাত হোসেন ও সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিকদার।
এছাড়া বিদেশ থেকে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগের তাসদিক হাসান ও চীনের সাংহাই হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের জেযহি লি এ গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করেন।
এ বিষয়ে প্রভাষক সাহাদাত হোসেন জানান, সমীক্ষাটি বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারিতে ভয় ও বিষণœতার স্তর এবং এর পেছনের কারণগুলো নির্ধারণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। গবেষণাটি ২০ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত এক মাস সময় ধরে করা হয়। এতে সারা দেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৫০ জন প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ অনলাইন মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত প্রদান করেন। যাদের সবার বয়স ১৮ থেকে ৬৮ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ পুরুষ ও ৭৬ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী।
তিনি আরও জানান, কোভিড-১৯ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভীতি ও বিষণ্মতা নিরূপণের জন্য যথাক্রমে বাংলা ফেয়ার অব কোভিড-১৯ স্কেল অ্যান্ড বাংলা পেশেন্ট হেলথ কোয়েশ্চিনারি (পিএইচকিউ-৯ স্কেল) ব্যবহার করা হয় এবং নিখুঁত বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষকেরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন। সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে করোনা-ভীতি ১ দশমিক ৮৪ গুণ বেশি ছড়িয়েছে। এর ফলে তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৯০ গুণ বিষণœতা বেশি। এছাড়া সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট ৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ মানুষ বিষণœতার মধ্যে রয়েছেন।
গবেষণায় বলা হয়েছে, সুস্থ ব্যক্তিদের তুলনায় জটিল রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনা-ভীতি বেশি এবং তারা অন্যদের তুলনায় বেশি বিষণ্মতায় ভোগেন। যারা মহামারিকে অত্যন্ত বিপজ্জনক মনে করেন, তাদের মধ্যে মহামারি-সম্পর্কিত ভীতি বেশি। বিপরীতে মহামারিকে হালকাভাবে দেখছেন, এমন মানুষের মাঝে বিষণ্মতা কম।
গবেষণার বিষয়ে জাবি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সভাপতি ও সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দীন সিদকার বলেন, কোয়ারেন্টিনের নিয়ম ভঙ্গ করলে ভাইরাস ছড়াতে পারেÑ বিশ্বাসী লোকদের মাঝে এবং যারা নিজেদের করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদ মনে করেন না, তাদের মধ্যে করোনা-ভীতি বেশি। গবেষকরা বলেন, যারা নিজেদের হাত সাবান, পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার রাখেন, তাদের মাঝে করোনার ভীতি কম। অন্যদিকে করোনা প্রতিরোধে উদাসীন মানুষের ভীতি অন্যদের তুলনায় কম। গবেষণার অন্যতম সহযোগী সাদিয়া সুলতানা বলেন, ‘কোভিড-১৯ সম্পর্কিত বিশেষ জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ভীতি ও বিষণ্মতা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সঙ্গে জনসাধারণের করোনা-ভীতি ও বিষণ্মতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত।’ গবেষক ও শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের কোভিড ১৯-এর ভীতি ও বিষণ্মতার লক্ষণগুলো দূর করতে পারলে এর প্রতিরোধ কার্যক্রম সফলতা পাবে; যা করোনাভাইরাসের ভবিষ্যত ঢেউগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।’