যাত্রী ছাউনির দিনকাল
শাকিল হোসেন, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ০৮:৫১ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪ | আপডেট: ১১:৪৯ এএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
একসময় ছিল সোনার সংসার। স্বামী ও এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল সুলতানা ইয়াসমিন দম্পতির। হঠাৎ অজানা রোগে সুলতানা ইয়াসমিন শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়েন। ছাড়তে হয় স্বামীর সুখের সংসার।
সুলতানা ইয়াসমিন বিকলাঙ্গ হওয়ায় সৎমা তাদের বাড়িতে জায়গা দেয়নি। এরপর থেকেই নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বাধ্য হয়ে যাত্রীছাউনিতে থাকছেন তারা। মা ও মেয়ে রাস্তাঘাটে, হাটবাজারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল টাকা পয়সা তুলে সংসার চালান।
সুলতানা ইয়াসমিনের (৪৫) বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বালাহৈর গ্রামে। তার মেয়ে তানজিলা খাতুন (১৬) বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সুলতানা ইয়াসমিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার সোনাইচন্ডী গ্রামের শুকুর আলীর মেয়ে এবং উপজেলা বালাহৈর গ্রামের তাইজুল ইসলামের স্ত্রী।
গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে নিয়ামতপুর সদর বাস টার্মিনালের যাত্রী ছাউনিতে গিয়ে প্রতিবন্ধী মা ও মেয়ের দেখা মেলে। যাত্রীছাউনিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে জামাকাপড়। সেখানেই এখন তাদের বসতঘর। অসহ্য ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন মা। নেই ওষুধ কেনার টাকা। চাল না থাকায় রান্না হয়নি সকালে। ১৬ বছর বয়সী বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী মেয়ে তানজিলা খাতুন বেরিয়েছেন ভিক্ষা করতে। দুপুরে ফিরলে তবেই খাওয়া হবে তাদের।
তানজিলা খাতুন দিনকালকে বলেন, আমাদের একটা থাকার ঘর নেই। মাকে নিয়ে খুব কষ্টে থাকি। সমাজের কোনো হৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের একটি ঘর দিতেন তাহলে আমাদের আর এভাবে রোদ বৃষ্টিতে কষ্ট হতো না।
সুলতানা ইয়াসমিন বলেন, স্বামী ও মেয়েকে নিয়ে আমারও একটা সুখের সংসার ছিল। তিন বছর আগে হঠাৎ শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়লে স্বামী তালাক দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন। মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতে উঠতে দেয়নি সৎমা। কিছু ব্যক্তির সহযোগিতায় নিয়ামতপুর উপজেলা হাসপাতাল চত্বরে ছিলাম। এরপর সেখানেও থাকার জায়গা না পেয়ে মাস তিনেক ধরে মেয়েকে নিয়ে যাত্রী ছাউনিতে থাকছি।
তিনি বলেন, মেয়েটা সারাদিন বিভিন্ন জনের কাছে গিয়ে হাত পাতে। যেটুকু চাল টাকা পয়সা পায় সেটুকু নিয়ে এক বেলা দুমুঠো ভাত মুখে উঠে। আমার মেয়েটাও বড় হচ্ছে। মেয়েটার জন্য একটা থাকার ঘরের প্রয়োজন। আদোও কি মিটবে তার সেই প্রয়োজন?
দিনকাল/এমএইচআর