তারেক রহমান : স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র সুরক্ষার দিকপাল
প্রকাশ: ১০:০৭ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর,
বুধবার,২০২৪ | আপডেট: ০৯:৫২ এএম, ৪ অক্টোবর,শুক্রবার,২০২৪
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বৃহত্তম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বা দল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে শুরু করে অদ্যাবধি বিএনপি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ঝান্ডা সমুন্নত রাখা এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৈনিক জীবন হতে শুরু করে রাজনৈতিক জীবনে চিন্তা-চেতনা, চলনে-বলনে প্রতিটি ক্ষেত্রে অসাধারণ দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের অপূর্ব নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রণীত ১৯ দফার সর্বপ্রথম দফাই হচ্ছে To Preserve the independence, integrity and sovereignty of the state at all cost. গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক শাসন ও মূল্যবোধের প্রতি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-এর compassionate commitment ছিলো বলেই সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। অথচ তৎকালীন শেখ মুজিব নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে one party system বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের আন্দোলনে বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবদান ও কৃতিত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দেশের মানুষের অধিকারের জন্য এত সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার পৃথিবীর ক’জন রাজনীতিবিদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে? আর এ জন্যই বাংলাদেশের জনগণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে Mother of Democracy উপাধিতে ভূষিত করেছে। এখানে ড. আসিফ নজরুল-এর একটি কথা প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের সাথে জিয়া পরিবারের ভাগ্য একাকার হয়ে গিয়েছে। জিয়া পরিবার ভাল থাকলে বাংলাদেশ ভাল থাকে, আর জিয়া পরিবার ভাল না থাকলে বাংলাদেশও ভাল থাকে না।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য উত্তরসূরি দেশনায়ক জনাব তারেক রহমান। যিনি বর্তমানে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্ব প্রদানে তিনি একজন দক্ষ নাবিক। বাংলাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন পথ-পরিক্রমা অতিক্রম করে বিদেশ বিভুঁইয়ে অবস্থান করেও দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনাব তারেক রহমান-এর সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা বিরোধী আন্দোলন তীব্র হতে তীব্রতর হতে থাকে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে বাংলাদেশের জনগণ শুধু রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভোটের অধিকার ও বাকস্বাধীনতা হারায়নি, স্বয়ং বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে তার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হারিয়ে ফেলেছিল। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলেছিল পথ, জনগণ হয়ে গিয়েছিল দিশেহারা। এ রকম পরিস্থিতিতে জনাব তারেক রহমান স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনের ডাক দেন এবং আপামর জনসাধারণকে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহ্বান জানান। বক্তব্য-বিবৃতি ও ভিডিও বার্তার মাধ্যমে জনাব তারেক রহমান জনগণকে উজ্জীবিত করে তোলেন। ফলশ্রæতিতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে।
স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে একটা কালো অধ্যায় হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই সময়ে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন সত্তা হারিয়ে ফেলেছিল। এই সময়ে বাংলাদেশ অনেকটা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যের মতো কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা ও তার সরকার বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে দু’হাত উজাড় করে ভারতকে সব দিয়েছে। ঐ সময় ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ঐ সমস্ত চুক্তিগুলোর সকল Termes and Conditions এবং Termes and Conditions গুলো পুনরায় গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দাবি রাখে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রীরা গর্বের সাথে বলতেন ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো কিংবা ভারতকে যা দেয়া হয়েছে কেয়ামত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রতি ভারত কৃতজ্ঞ থাকবে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য এর চেয়ে নির্লজ্জ ও ঘৃণ্য আর কী হতে পারে! ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা উত্তর বাংলাদেশে নতুন করে সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সকল বাধা-বিপত্তি ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বাংলাদেশকে এ লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আধুনিক যুগে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রকে ভৌগোলিকভাবে দখল করার প্রয়োজন খুব একটা মনে করে না। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য দখল কিংবা সাংস্কৃতিকভাবে বিকলাঙ্গ করতে পারলেই রাষ্ট্র দখলের শামিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ সব সময়ই কমবেশি বিদ্যমান ছিল। কেবল মাত্র রাজনৈতিক দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ও জনগণের নির্বাচিত সরকার এই সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যাবশ্যক সংস্কার কার্য সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য সাধারণ নির্বাচন অনতি বিলম্বে আয়োজন করবে বলে দেশবাসী আশা করে। জনাব তারেক রহমান বলেছেন, সংস্কার কার্যক্রমের পথ ধরে নির্বাচনী রোডম্যাপে উঠবে বাংলাদেশ। আসুন আমরা সবাই কাজের মাধ্যমে জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করি।
বিএনপি সকল সময়ই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে Friendship to all, Malice to none. আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থায় এককভাবে কোন রাষ্ট্র চলতে পারে না। প্রতিটি রাষ্ট্র একে অন্যের সাথে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলে। এই সম্পর্কের ভিত্তি হতে হয় পারস্পরিক স্বার্থ, সম্মান ও মর্যাদার ভিত্তিতে। কোনভাবেই প্রভু ও দাসের মতো হতে পারে না।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, I will make politics difficult for politicians. অনেকে এই কথাটির ভুল interpretation করে থাকেন। তবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই কথাটির মাধ্যমে রাজনীতি ও রাজনীতিবিদগণ কেমন হওয়া উচিত তা বুঝাতে চেয়েছেন। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনয়নের জন্য তিনি এই কথাটি বলেছিলেন। Do not ask what your country can do for you, but ask yourself what you can do for your country. শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান-এর রাজনীতি ও রাজনৈতিক দর্শন হতে আমরা এই শিক্ষা পেয়ে থাকি।
জনাব তারেক রহমান রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনয়নের জন্য দিবারাত্রি অক্লান্ত ও কঠিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর সুদক্ষ, সুযোগ্য ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার হারানো পথ ফিরে পাবে। জনাব তারেক রহমানের রাজনীতি উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি। জনগণকে কেন্দ্র করেই তাঁর রাজনীতি আবর্তিত প্রতিবর্তিত ও পরিচালিত হয়। তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন জনগণই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আব্রাহাম লিংকনের Democracy is a government of the people, for the people, by the people কথাটির প্রতি জনাব তারেক রহমানের দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস।
বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার জোর গুঞ্জন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জনাব তারেক রহমান বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত জনসভায় দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “কেউ যদি মনে করেন উন্নত ও নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আরো নতুন রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন, তাতেও দোষের কিছু নেই। কারণ শেষ পর্যন্ত জনগণই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে তারা কাকে সমর্থন জানাবে।” জনগণ ও জনসমর্থনের প্রতি এহেন শ্রদ্ধা, আস্থা ও বিশ্বাস দেখানোর হিম্মত বাংলাদেশ তো বটেই বরং বিশ্বে ক’জন রাজনীতিবিদের রয়েছে?
জনাব তারেক রহমান-এর প্রতিটি বক্তব্যে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মনের কথা ফুটে উঠে। একজন সফল ও স্বার্থক রাজনীতিবিদের স্বার্থকতা বোধকরি এখানেই।
সাম্রাজ্যবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এবং দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে জনাব তারেক রহমান অচিরেই তাঁর রাজনীতির ঈস্পিত লক্ষ্যে উপনীত হবেন। জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি’র হাতে দেশ ও দেশের মানুষ ভালো ও নিরাপদ থাকবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ঝান্ডা সমুন্নত থাকবে।