মেট্রোরেল উদ্বোধন : প্রস্তুত নয় ‘এমআরটি পুলিশ’, আপাতত সেবায় রিজার্ভ ফোর্স-থানা পুলিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৫ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ১১:০৪ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
রেলওয়ে পুলিশের আদলে মেট্রোরেলের জন্যও গঠিত হচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট। নাম হবে ‘ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ’ বা ‘এমআরটি পুলিশ’। মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে নতুন এ ইউনিট। ২৮ ডিসেম্বর দেশের প্রথম মেট্রোরেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ইউনিটটির জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোসহ কিছু বিষয় অনুমোদন না হওয়ায় আপাতত সেবা দেবে পুলিশের বিশেষায়িত ফোর্স ও থানা পুলিশ। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। সার্বিক দিক বিবেচনায় মেট্রোরেল ও যাত্রীদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মেট্রোরেলের জন্যও আলাদা ইউনিট গঠনের প্রস্তাব ছিল শুরু থেকেই। রেলওয়ে পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশের একটি অন্যতম প্রাচীন বিশেষায়িত ইউনিট। এটি ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রেলওয়ে পুলিশ তার অধিক্ষেত্রে জেলা পুলিশের মতোই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, তদন্ত ও অন্যান্য পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমআরটি পুলিশও অনুরূপভাবে মেট্রোরেলের সার্বিক নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তার পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অপরাধ দমনে কাজ করবে। প্রত্যেকটি স্টেশনেই থাকবে পুলিশ ফাঁড়ি। মেট্রোরেল উদ্বোধনের আগে এমআরটি পুলিশের অনুমোদন হলেও কার্যক্রম পরিচালনা করা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না। উদ্বোধনের আগে ও উদ্বোধন পরবর্তী সময়ে এমআরটি পুলিশ গঠনের আগ পর্যন্ত নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স ও থানা পুলিশ নিরাপত্তা দেবে বলে জানা যায়।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) বলছে, মেট্রোরেলের যাবতীয় নিরাপত্তা, যাত্রীদের নিরাপত্তা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সহায়তা নেয়া হয়েছে। এমআরটি পুলিশ গঠনের আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ফোর্স ও থানা পুলিশ এ সেবা দেবে।
পুলিশ সদর দফতর বলছে, ডিএমটিসিএলের চাহিদার ভিত্তিতে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। যে কোনো নিরাপত্তার জন্য পুলিশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, মেট্রোরেল দেশের একটি নতুন ট্রানজিট প্রকল্প। তাই স্থাপনার নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও যাত্রী সুরক্ষায় একটি বিশেষ ইউনিট দরকার। এছাড়া মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে এটিএম বুথ, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম ও দোকান থাকবে। প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করবে। এজন্য প্রত্যেকটি স্টেশনে পুলিশ ফাঁড়ির প্রস্তাব করা হয়েছে। ডিএমটিসিএলের এ যোগাযোগ নেটওয়ার্কে ৫১টি উড়াল ও ৫৩টি পাতাল স্টেশনসহ মোট ১০৪টি স্টেশন তৈরি হবে। বিশাল এ স্থাপনা ও যাত্রীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের হাতে দিতে এ বিশেষায়িত্ব পুলিশ ইউনিট গঠন করা হচ্ছে।
এমআরটি পুলিশে ৩৫৭টি পদ সৃষ্টি এবং ২১টি যানবাহন টিওঅ্যান্ডইতে অন্তর্ভুক্তকরণ সম্বলিত প্রস্তাবটি জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। পুলিশ সদর দফতর জানায়, এমআরটি পুলিশের জন্য একজন উপ-মহাপরিদর্শক, একজন অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, একজন পুলিশ সুপার, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সাতজন ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র), একজন ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র), ছয়জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৫১ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই), ১০ জন নায়েক, ২৭০ জন কনস্টেবল, একজন হিসাবরক্ষক, একজন উপ-সহকারী হিসাবরক্ষক ও একজন কম্পিউটার অপারেটরসহ মোট ৩৫৭ জন জনবলের একটি সাংগঠনিক কাঠামো মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ওঅ্যান্ডএম) ফারুক আহমেদ বলেন, নিরাপত্তার জন্য আইনে যা যা রয়েছে তার সবকিছু পুলিশ দেখভাল করবে। মেট্রোরেলের ভেতর পুলিশ থাকবে না, তবে জরুরি প্রয়োজনে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এছাড়া মেট্রোরেলের বাইরে স্টেশনে নিরাপত্তা, প্রবেশমুখে আর্চওয়েতে চেকিং, সিসিটিভি মনিটরিংসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাজ করবে পুলিশের নতুন এ ইউনিট।
তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের ভেতরে কিংবা বাইরে অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে। জানতে চাইলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, পুলিশ থেকে জনবল পাওয়ার পর তাদের প্রশিক্ষণ ও দায়িত্ব বণ্টনে কয়েকদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে। আশা করছি শিগগির অনুমোদন হয়ে যাবে। তার আগ পর্যন্ত পুলিশের রিজার্ভ ফোর্স থেকে অতিরিক্ত পুলিশকে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। সহযোগিতার জন্য থানা পুলিশও কাজ করবে। ডিএমটিসিএলের এমডি আরও বলেন, আমাদের বেশি প্রয়োজন ছিল অপারেশন ও মেনটেইনেন্সের জনবল, সেসব পদে আমরা লোক নিয়োগ দিয়েছি।
এদিকে, মেট্রোরেলের ভাড়া নির্ধারণ করেছে সরকার। প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ টাকা। আর সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা ও সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। তবে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাড়া মওকুফ থাকবে। মেট্রোরেলে মাসিক, সাপ্তাহিক, পারিবারিক এবং কার্ডে ভাড়া দেয়ার বিশেষ সুবিধা থাকবে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রতিবার ভ্রমণে পাবেন বিশেষ ছাড়। মেট্রোরেলের প্রতি কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবেন ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে ৯ ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করবেন। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে এবং দাঁড়িয়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবেন। দিয়াবাড়ির ডিপো থেকে ধাপে ধাপে ট্র্যাকে উঠেছে মেট্রোর একেকটি ট্রেন সেট। শুরুটা হয়েছিল ডিপো থেকে স্টেশন এক পর্যন্ত। এরপর স্টেশন দুই, তিন হয়ে পল্লবী। এরই মধ্যে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের ট্রায়াল হয়ে গেছে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎচালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে। উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। তবে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২২ হাজার কোটি টাকা।