যত্রতত্র শিল্প-কারখানা গড়ে না তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৫ পিএম, ১৩ নভেম্বর,রবিবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫৮ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
উদ্যোক্তাদের যত্রতত্র শিল্প-কারখানা না গড়ে তুলে পরিবেশবান্ধব কারখানা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক ২০২২’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উদ্যোক্তাদের এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ছাড়াও বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি এসএম মান্নান কচি ও সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারখানা গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। তার ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি। তিনি বলেন, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলেছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশাল উন্নতি হয়েছে। পদ্মা সেতুসহ শত শত সেতু করেছি। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করেছি। এসবের মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ নয়, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও সৃষ্টি করছি। শেখ হাসিনা বলেন, এই ১০০টি অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ চাই। এগুলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থেকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। এখানে বহুমুখী বিনিয়োগ হোক, অঞ্চলভিত্তিক কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য গড়ে উঠুক। এর চাহিদা কখনো দেশ ও বিদেশে কমবে না।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তৈরি হোন পরিস্থিতির জন্য, ব্যবসায়ী সুবিধা এবং সোর্সিংয়ের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা বাংলাদেশ। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের স্বাগত জানাই, পাশাপাশি দেশি উদ্যোক্তাদের বলব, আপনারও পার্টনার হিসেবে বিদেশি উদ্যোক্তাদের খুঁজে নিন। কারণ বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ রয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বাংলাদেশে, কারণ আমাদের নীতিমালা বিনিয়োগবান্ধব। একই সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা রয়েছে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য আমাদের শ্রমিক তাদের প্রশিক্ষিত করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছি। আপনারাও শ্রমিকদের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছেন। তারা যাতে সুন্দর ও সুষ্ঠু পরিবেশে কাজ করতে পারে, মনোযোগ দিতে পারে তা একান্তভাবে প্রয়োজন। সবাইকে শ্রমিকদের ওপর বিশেষ সৃষ্টি দিতে হবে।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আমার রাজনীতি হচ্ছে এদেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষের জন্য। তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা কাজে লাগাতে হবে। সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে মানুষ। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে হবে। নিজেরা উৎপাদন করতে হবে। ভিক্ষা করে চলব না। করোনার ভয়াবহতার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, তারওপর আবার স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) পাল্টা স্যাংশন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে শুধু আমরাই নয়, সারাবিশ্ব একটি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে হিমশিম খাচ্ছে। কাজেই যুদ্ধ বন্ধ হোক এটা আমরা চাই, স্যাংশন পাল্টা স্যাংশন বন্ধ হোক। সহজভাবে প্রত্যেকটা দেশের মানুষ যেন জীবনযাপন করতে পারে, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে আছে। এই থেকে উত্তরণ চাই। মেইড ইন বাংলাদেশ উইকে বেশ কিছু সংলাপ হবে। এই সংলাপগুলো উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে বদলে দিয়েছি। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর বলেছিলাম, ‘বদলে যাবে বাংলাদেশ’। আজ আমরা সত্যিই বদলে দিয়েছি। আমরা নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি। এখন আমরা ২০৪১ সালের রূপকল্প নিয়ে কাজ করছি। উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত করতে কাজ করছি। আমার ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
স্বাগত বক্তব্যে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সরকার ২০২৬ সালে ১০০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে চায়। আমরা রফতানি বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিয়েছি, পণ্যবাজার বহুমুখী করা, দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করছি। আশা করছি, সরকারের নীতিগত সহায়তা পেলে আমরা ২০৩০ সালে পোশাক খাতে রফতানি আয় ১০০ বিলিয়ন ডলারে বেশি করতে পারব। এর ফলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের যে ৭ শতাংশ পোশাক রয়েছে, এটি ১৮ শতাংশে উন্নীত হবে। এ জন্য সরকারে কাছে ফারুক হাসান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাস্টমস ও বন্ড বিভাগ বাধার বিষয়টি তুলে ধরে নিষ্পত্তির অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে উৎসের ১ শতাংশের দশমিক ৫০ শতাংশ পুনর্বহাল রাখার দাবি জানান। তার উত্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের পরও ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। নতুন অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ শতাংশ। এ জন্য পোশাক মালিকদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ২০৩০ সালের ১০০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি অর্জনের যে টার্গেট নিয়েছেন, প্রথমে তার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তারপর তা বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান দেশি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, রফতানির বাজার বাড়াতে হবে, পণ্যের বৈচিত্র্য আনতে হবে। কম দামি পণ্যের পাশাপাশি বেশি দামি পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
উপস্থিত বিদেশি ক্রেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আমাদের কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ খুবই চমৎকার। এখানে বেশির শ্রমিক নারী। তাই আপনারা আমাদের কাছ থেকে পোশাক কেনার জন্য এগিয়ে আসুন। অনুষ্ঠানে চার ক্যাটাগরিতে চার ব্যক্তি পুরস্কৃত করে বিজিএমইএ। প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন- রঞ্জন মাহতানি, বাবু অমল পোদ্দার, এস এম খালেদ এবং শাহদাত হোসেন।