পিপলস লিজিংয়ের ২৫ ঋণখেলাপিকে গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৩ এএম, ১৯ মে,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ১১:৩৬ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) ২৫ ঋণখেলাপিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। গ্রেফতার করে তাদের আদালতের নির্ধারিত দিনে উপস্থিত করতে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৭ মার্চ পিপলস লিজিংয়ের ৬৬ ঋণখেলাপিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তলবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে যে সব ঋণখেলাপি উপস্থিত হননি বা আইনজীবীর মাধ্যমে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি এমন ২৫ জনকে গ্রেফতার করতে বলা হয়। হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক (কোম্পানি কোর্ট) বেঞ্চ লিখিত আদেশ দেন। পিপলস লিজিংয়ের আইনজীবী মেসবাহুর রহমান শুভ এ তথ্য জানিয়েছেন। ৬৬ ঋণখেলাপিকে তিন ভাগে ১১, ১২ এবং ১৯ এপ্রিল সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে বলে আদেশে বলা হয়। ৭ মার্চ বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের (কোম্পানি কোর্ট) হাইকোর্টের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কোম্পানিগুলোর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান জানিয়েছেন, এককভাবে ৬৩ প্রতিষ্ঠানের ৬৩ জন এবং অপর একটি প্রতিষ্ঠানের (নাহার ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির) চেয়ারম্যান, এমডি ও পরিচালকসহ মোট ৬৬ জনকে তলব করা হয়।
তবে আদালত সূত্র বলছে, ৭৭ জনকে তলব করা হয়েছে। ব্যারিস্টার মেসবাহুর সাংবাদিকদের জানান, ২০২১ সালের ১৩ জুলাই পিপলস লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছিলেন হাইকোর্ট। পিপলস লিজিং যেন আবারও কার্যকর হয়ে ওঠে, সেজন্য পুনর্গঠিত বোর্ড চেয়ারম্যান ও সদস্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন, পিপলস লিজিং-এর ঋণগ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। তিনি জানান, ওইদিন (২০২১ সালের ১৩ জুলাই) আদেশে যেসব ঋণগ্রহীতারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা জমা দিতে পারেননি, তাদের টাকা জমা দেওয়ার জন্য বলেছিলেন আদালত। কিন্তু আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওনারা কোনো টাকা জমা দেননি। তাই পরিচালনা বোর্ডের করা আবেদন শুনানি নিয়ে ঋণগ্রহীতাদের তলব করেন আদালত।
এর আগে গত বছরের (২০২১ সাল) ২১ জুন পি কে হালদার কান্ডে আলোচনায় আসা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে পুনর্গঠন করার নির্দেশনা চেয়ে ২০১ জন আমানতকারী হাইকোর্টে আবেদন করেন। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ১০ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করেন হাইকোর্ট। বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম। সদস্যরা হলেন- সাবেক সচিব আনোয়ারুল ইসলাম শিকদার, জেলা ও দায়রা জজ (অব.) হাসান শাহেদ ফেরদৌস, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার (অব.) কাজী তাওফিকুল ইসলাম, এফসিএ নুর-ই খোদা আব্দুল মবিন ও মাওলা মোহাম্মাদ, প্রতিষ্ঠানটির সঞ্চয়কারীদের প্রতিনিধি ডা. নাশিদ কামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নুরুল কবির এবং আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মাদ জালালুদ্দিন। ১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিপলস লিজিংকে অবসায়নের পক্ষে সম্মতি দেয় সরকার। এরপর আদালতের নির্দেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানকে অবসায়ক হিসেবে দেওয়া হয় দায়িত্ব। অবসায়ক নিয়োগের পর এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তবে এখনই আমানতকারীরা কোনো টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। অবসায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালের জুলাইয়ে সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) হিসেবে মো. আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয়। তার করা এক আবেদনের ওপর শুনানিকালে পিপলস লিজিংয়ের প্রায় ৫০০ জনের বেশি ঋণগ্রহীতার একটি তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। এরপর পাঁচ লাখ টাকা এবং তার ওপরে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যারা খেলাপি হয়েছে এমন ২৮০ জনকে ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। তাদের হাজির হয়ে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছিল। পরে ওই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তারা হাজির হয়ে নিজের ব্যাখ্যা দেন।