কুষ্টিয়ায় এজলাসে দাঁড়িয়ে বিচারকের হাড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিলেন আইনজীবী!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৪৬ পিএম, ৩ মার্চ,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০১:২৭ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
কুষ্টিয়ায় এজলাসে দাঁড়িয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের হাড় ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম দুলাল।
গতকাল বুধবার (২ মার্চ) দুপুর ১টার দিকে কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আদালত পাড়ায় চলছে আলোচনা সমালোচনার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্যের। আইনজীবী সমিতির সভাপতির এ হুমকি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজলাস ত্যাগ করে খাস কামরায় চলে যান। ঘটনার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আদালতের বিচারকরা দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ওই ম্যাজিস্ট্রেট।
জানা গেছে, বদলিজনিত কারণে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমান একই সঙ্গে কুষ্টিয়া সদর এবং দৌলতপুর আমলি আদালতের বিচারকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বেঞ্চ সহকারী সোহাগ মান্নান জানান, কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে বসে মুস্তাফিজুর রহমান একই সঙ্গে দুই আদালতের (সদর এবং দৌলতপুর) দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বুধবার আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তিনি প্রথমে সদরের মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এরপর শুরু হয় দৌলতপুর আমলি আদালতের মামলার কার্যক্রম।
দুপুর ১টার দিকে দৌলতপুর জিআর ৪০/২২ মামলার জামিন শুনানি শুরু হয়। প্রথমে জুনিয়র একজন আইনজীবী মামলার শুনানি করছিলেন। পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম দুলাল। একপর্যায়ে তিনিও জামিন শুনানিতে অংশ নিয়ে আদালতকে বলেন, যে মামলা এই মামলায় আসামিকে ৭ দিন পরই জামিন দেওয়া যায়। কিন্তু এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হচ্ছে আসামি জেলহাজতে রয়েছেন। জামিন পাচ্ছেন না।
তখন ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, 'আমার কাছে এই মামলার প্রথম শুনানি হচ্ছে।' শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট জামিন নামঞ্জুর করেন। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম দুলাল কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনাকে আমি ভালো মত চিনি। আপনার হাড় আমি ভেঙে দেব।'
প্রকাশ্যে এজলাসে আইনজীবী সভাপতির এই হুমকি শুনে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্টরা সবাই হতবিহবল হয়ে পড়েন। এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাজিস্ট্রেট মো. মুস্তাফিজুর রহমান সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'আপনি যেহেতু আমার হাড় ভেঙে দিতে চেয়েছেন, তাই এই অবস্থায় আমার আর এই আদালতে থাকা ঠিক হবে না।' এ কথা বলেই তিনি এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান। ম্যাজিস্ট্রেট খাস কামরায় চলে যাওয়ার পর নূরুল ইসলাম দুলালও এজলাস ত্যাগ করেন। প্রায় এক ঘণ্টা খাস কারায় অবস্থানের পর দুপুর ২টার দিকে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট এজলাসে বসেন। তবে আর কোনো শুনানি বা কার্যক্রম পরিচালনা না করেই এ দিনের সব মামলার পরবর্তী দিন আজ বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করে খাস কামরা ত্যাগ করেন তিনি।
কুষ্টিয়া চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির নূরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি পরে জেনেছি। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।
এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে এবং স্বশরীরে আদালতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট মো: মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও অপারগতা প্রকাশ করায় তা সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে আদালতে গিয়ে কুষ্টিয়ার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ তারিক এজাজের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি তার সহকারী দিয়ে বলেন, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা মানা।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি নূরুল ইসলাম দুলাল বলেন, আমার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেটকে হুমকি দেওয়ার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এজলাসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অতি দুর্বল মামলায় আসামিদের জামিন মঞ্জুরের অনুরোধ জানিয়ে কিছু পরামর্শ দিলে তিনি আমাদের ওপর প্রচণ্ড রেগে যান এবং অশালীন কথাবার্তা বলেন। পরে এ নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে পরে জেলা জজের উপস্থিতিতে আইনজীবী ও বিচারকদের আলোচনা হয়। বিষয়টি মীমাংসাও হয়ে গেছে।