সরকারিভাবে বরেণ্যদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫২ এএম, ৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণে অবদান রাখা বরেণ্য ব্যক্তিরা তরুণদের কাছে সব সময় অনুসরণীয়-অনুকরণীয়। তাদের জীবনকর্ম চলার পাথেয়। এ তালিকায় আছেন কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিক থেকে শুরু করে শিক্ষক-গবেষকও। এতদিন বিক্ষিপ্তভাবে কোনো কোনো গুণীজনের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন ও পালন করতো সরকার। এবার তরুণদের উদ্বুদ্ধ করতে ও বরেণ্য ব্যক্তিদের কর্মকে স্মরণীয় করে রাখতে তাদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারিভাবে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষণ ও বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন নীতিমালা, ২০২১’ করেছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। নীতিমালা অনুযায়ী কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, নৃতত্ত্ব ব্যক্তিত্ব এবং ভাষা, রাজনীতি, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সমাজ, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় অবদান রাখা প্রয়াত-জীবিত বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনকর্ম নিয়ে জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর বলেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষণাবেক্ষণ ও বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন এবং পালনে নীতিমালা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বরেণ্য ব্যক্তিদের কর্ম স্মরণীয় করে রাখার পাশাপাশি তরুণ সমাজকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করা হবে। আমরা সুসংগঠিতভাবে বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবো।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. শওকত আলী বলেন, বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী আমরা পালন করি। এতদিন একেক দফতর একেকভাবে করতো। মূলত এটি সুসংগঠিতভাবে করতে নীতিমালাটি করা হয়েছে। এখন সবাই বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে অনুষ্ঠান করার ক্ষেত্রে একটি গাইডলাইন পেলো।
বাংলাদেশে তো বরেণ্য ব্যক্তি কম নেই। যুগ যুগ ধরে বরেণ্য ব্যক্তিরা জন্মেছেন। কিন্তু আমরা তো সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে পারবো না, বাজেট সীমিত। সেজন্য আমরা মাঠ পর্যায় থেকে তালিকা নিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ঠিক করে দেই। তহবিল সংকট থাকলে এ বছর একজনেরটা হলো পরের বছর আরেকজনেরটা হবে। তবে যারা প্রথিতযশা আছেন, তাদের আমরা বাদ দেই না। বাংলা ভাষার প্রথম নারী কবি চন্দ্রাবতীকে নিয়ে কখনো আমাদের অনুষ্ঠান হয়নি। আমরা তাকে তালিকায় রেখেছি, এবার হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, যেসব বরেণ্য ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করবো তাদের একটি তালিকা করা হচ্ছে। এ তালিকায় ৯০ জনের মতো বরেণ্য ব্যক্তি থাকবেন। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে দু-তিনটি প্রতিষ্ঠানও অনুষ্ঠান করবে, কারণ তাদের অবদান একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই। যেমন- চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের যেমন ভূমিকা, সাহিত্যেও তেমন ভূমিকা রয়েছে। এ তালিকার বাইরের বরেণ্যদের নিয়ে অনুষ্ঠান করা যাবে না, তাও নয়। প্রোগ্রামটা সাধারণত জন্মদিনেই করা হয়।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষণ সম্পর্কিত বিষয় উদযাপন করে স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয়ভাবে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশ ও দেশের মানুষের জন্য হিতকর ক্ষেত্রগুলোতে অবদান রাখা ব্যক্তিদের কর্মকে স্মরণীয় রাখতে চায় সরকার। যথাযথভাবে তাদের অবদান গুরুত্বসহকারে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই করা হয়েছে এ সংক্রান্ত নীতিমালা। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, প্রয়াত বা জীবিত বরেণ্য ব্যক্তিদের তালিকা করা হবে। বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবন, কর্ম ও অবদানের ওপর ভিত্তি করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরেণ্য ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওতাধীন দফতর বা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব দেবে।
এতে আরও বলা হয়, বরেণ্য ব্যক্তিদের কর্ম ও অবদান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছানোর জন্য গুণগতমান বজায় রেখে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানমালা আয়োজন করা এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দায়িত্ব পালনকারী স্থানীয় প্রশাসন ও দফতর বা সংস্থার নামসহ প্রস্তুত করা হবে বছরভিত্তিক ক্যালেন্ডার। একই সঙ্গে তাদের জীবনাচরণ, কর্ম ও অবদানের ওপর গবেষণা এবং প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে। বরেণ্য ব্যক্তি নির্বাচন প্রক্রিয়া : নীতিমালায় বলা হয়েছে, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের বরেণ্য ব্যক্তি বা গুণীজনদের তাদের জীবন/কর্ম/অবদান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করে নির্বাচন করবে। মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দফতর বা সংস্থা তাদের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশের বরেণ্য ব্যক্তি বা গুণীজনদের অবদান বা কর্মসহ তালিকা প্রস্তুত করে প্রমাণসহ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে মূল তালিকায় অন্তর্ভুক্তির আবেদন করবে। একই সঙ্গে প্রতি বছর অনুষ্ঠান আয়োজনের সম্ভাব্য বাজেটসহ প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। জেলা প্রশাসকরা নিজ জেলার বরেণ্য ব্যক্তিদের জনহিতকর অবদানের ওপর বিবেচনা করে তাদের অবদান উল্লেখ করে তালিকা প্রণয়ন করে তালিকাভুক্তির জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। বরেণ্য ব্যক্তিদের অবদানের ওপর অনুষ্ঠান পরিচালনা : এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য মন্ত্রণালয়, দফতর/সংস্থা ও স্থানীয় প্রশাসনিক পর্যায়ে আলাদা আলাদা আয়োজক কমিটি থাকবে। আয়োজক কমিটি অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যয় পর্যালোচনা করে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও সমন্বয় করবে। অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আয়োজক কমিটি প্রত্যেক বরেণ্য ব্যক্তির জন্য আলাদা অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। প্রতিটি অনুষ্ঠানে নিশ্চিত করা হবে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ। প্রতি বছর ২০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিটি দফতর বা সংস্থা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অনুষ্ঠানের নাম, সম্ভাব্য তারিখ, ধরন (জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী, স্মরণসভা, জীবনকর্মভিত্তিক আলোচনা, আলোচনা সভা ইত্যাদি) এবং প্রস্তাবিত বাজেট (বিভাজনসহ) মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্ট দফতর বা সংস্থা বরেণ্য ব্যক্তির নিজ জন্মস্থান, আঞ্চলিক পর্যায় বা জাতীয় পর্যায়ে জন্ম/মৃত্যু তারিখে বা কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। এক্ষেত্রে বরেণ্য ব্যক্তির পরিবারকে ওই অনুষ্ঠানে সম্পৃক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সুধীজনদের সম্মানী এবং দর্শক-শ্রোতাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা যাবে। এক্ষেত্রে শিশু, কিশোর, অভিভাবক ও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারবে। অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে মুদ্রিত আমন্ত্রণপত্র, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, লিফলেট, পুস্তিকা, স্মরণিকা ইত্যাদি মুদ্রণের ক্ষেত্রে ‘অর্থায়নে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ উল্লেখ থাকতে হবে।
থাকবে দুটি কমিটি : নীতিমালা অনুযায়ী সংস্কৃতি সচিবের নেতৃত্বে বরেণ্য ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী সংক্রান্ত চূড়ান্ত বাছাই কমিটি ও অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন) নেতৃত্বে থাকবে প্রাথমিক বাছাই কমিটি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী হবেন চূড়ান্ত কমিটির উপদেষ্টা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে বাছাই কমিটি মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তালিকা যাচাই-বাছাই করে মূল কমিটির কাছে পাঠাবে। তালিকা চূড়ান্ত করবে চূড়ান্ত বাছাই কমিটি। প্রতি বছর ২০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিটি দফতর ও সংস্থাকে বরেণ্য ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য অনুষ্ঠানের নাম, সম্ভাব্য তারিখ, ধরন ও প্রস্তাবিত বাজেট মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।