করোনার সংক্রমণ নিয়ে উপসংহারে আসা যাবে না - ফেরদৌস কাদরী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৭ এএম, ১৮ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:০৪ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
‘এশিয়ার নোবেল’ খ্যাত ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসের ডেল্টার মতো অতিসংক্রামক ধরন যে ফের আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।’
আজ শুক্রবার সকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সংলাপে এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। ‘র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন’ এ প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর সঙ্গে গণমাধ্যম সংলাপের আয়োজন করে।
সংলাপে র্যামন ম্যাগসাইসাই কমিটির পক্ষে সুসান আফান প্রশ্ন করেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে ফিলিপাইনের জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম। বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দিনে দুই হাজারের নিচে থাকছে। কিন্তু ফিলিপাইনে তা এখনো ১৮-২০ হাজার। বাংলাদেশের এ সাফল্যের নেপথ্যে কী?’
জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘বাংলাদেশে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম। তবুও এটা নিয়ে এখনই উপসংহারে আসার মতো কিছু বলা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতাও বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকার চলমান উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়ার অভ্যাস অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ কমছে বটে, কিন্তু এতে খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের অনেক দেশে সংক্রমণ এভাবে কমে আবার বেড়ে যাওয়ার নজির রয়েছে। তাই করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে বেশি দরকার ব্যাপকহারে টিকা দেয়া। আর বাংলাদেশ একটি টিকাবান্ধব দেশ। আমাদের ইপিআই কর্মসূচির সুনাম আছে।’
সংলাপে ফেরদৌসী কাদরী আরও বলেন, নারীদের লড়াই বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বেই রয়েছে। এ লড়াই অনেক কঠিন। এতে ধৈর্য, সহনশীলতা, দায়িত্বশীলতা দরকার। দায়িত্ব শুধু কাজের ক্ষেত্রে নয়, পরিবারের সব সদস্যের প্রতিও তা পালন করা দরকার। তবে লড়াইটা বেশ কঠিন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনেপ্রাণে একজন বাংলাদেশি। মানুষের অকুন্ঠ সহযোগিতায় আমি বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছি। পেয়েছি স্বামীসহ পরিবারের সবার অকুন্ঠ সহযোগিতা। আমার প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতাও আমি পেয়েছি।’
সংলাপে জাপানের সংবাদমাধ্যম এনএইচকে-এর সাংবাদিক আইকো ডোডেনের প্রশ্ন ছিল- ‘সারা বিশ্বে টিকা নিয়ে বৈষম্য বিরাজ করছে। এর কারণ অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক? এটি ধনী রাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের নমুনা কি না?’
জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, ‘আপনি যেগুলো বললেন, হয়তো সেসব কারণ এর পেছনে কাজ করছে। কিন্তু এর বিপরীতে বিশ্বে মানবিকতারও অনেক উদাহরণও আছে। যেমন- আমরা কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে টিকা পাচ্ছি। এটা একটা অনন্য উদ্যোগ। কোভিড-১৯-সংক্রান্ত গবেষণার কাজে পশ্চিমা অনেক দেশ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। ফলে পুরো বিশ্ব বন্ধুহীন হয়ে গেছে, এমনটি ভাবা চলবে না।’
গত ৩১ আগস্ট ‘এশিয়ার নোবেল’ হিসেবে পরিচিত ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। ফেরদৌসী কাদরীসহ এ পর্যন্ত ১২ ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন।
কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা এবং সাশ্রয়ী দামে সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন ফেরদৌসী কাদরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের নামে এ পুরস্কার দেয়া হয়। র্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৯৫৮ সাল থেকে পুরস্কার দেয়া শুরু হয়।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় প্রতি বছর ৩১ আগস্ট এ পুরস্কার দেয়া হয়। ৩১ আগস্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিন।