ভয়কে পরোয়া না করেই কাজ করে যাবে বিবিসি
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৯:৫৭ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী,শুক্রবার,২০২৩ | আপডেট: ০৮:০৯ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ভয় ও পক্ষপাতিত্ব ছাড়াই সাংবাদিকতা করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। গণমাধ্যমটির নয়া দিল্লি এবং মুম্বাই কার্যালয়ে ভারতের আয়কর বিভাগ টানা ৬০ ঘণ্টার তদন্ত ও তল্লাশি চালায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার ওই তল্লাশি শেষ হলে বিবিসি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ভয় না পেয়ে তারা পক্ষপাতমুক্তভাবে খবর পরিবেশন অব্যাহত রাখবে।
এদিন রাতে ‘বিবিসি নিউজ প্রেস টিম’ নামের একটি টুইটার একাউন্ট থেকে ওই বিবৃতি দেয় বিবিসি। টুইটে ব্রিটিশ গণমাধ্যমটি বলে, বিবিসি বিশ্বস্ত ও স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং সবসময় সাংবাদিক ও কর্মীদের সঙ্গে রয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে তাদের জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সাংবাদিকদের কথা সবার আগে বিবেচনা করে বিবিসি। তারা সরকারি কর্মকর্তাদেরও সহযোগিতা করে যাবে। বিবিসির আশা, সবকিছু দ্রুত সব মীমাংসা হয়ে যাবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আয়কর কর্তৃপক্ষ আমাদের দিল্লি ও মুম্বাই অফিস ছেড়ে চলে গেছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। কর্মীদের অনেককেই রাতে অফিসে থাকতে হয়েছে।
দীর্ঘ সময় জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এখন আমাদের কাজকর্ম আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। ভারতসহ অন্যত্র আমাদের শ্রোতা-পাঠকদের কাছে খবর পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর আগে গত মঙ্গলবার বিবিসি’র দিল্লি এবং মুম্বাইয়ের অফিসে সকাল সাড়ে ১১টায় অভিযান শুরু করে ভারতের আয়কর বিভাগ। এটি শেষ হয় বৃহস্পতিবার রাতে। প্রায় ৬০ ঘণ্টা ধরে বিবিসির দুই অফিসে অভিযান চালান আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। অভিযানের কারণে দুই অফিসে আটকা পড়েন বিবিসির বহু কর্মী। প্রায় তিন দিন অফিসে অবস্থান শেষে বৃহস্পতিবার রাতে তারা বাড়ি ফেরেন। আটকে পড়াদের মধ্যে একজন ব্রিটিশ সঞ্চালকও ছিলেন।
তল্লাশির বিষয়ে আগেই কর্মীদের জানিয়ে রেখেছিল বিবিসি কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতি হতে পারে আঁচ করে বুধবার সকালে কর্মীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলে ই-মেইল পাঠানো হয়। যদিও শুরু থেকেই আয়কর বিভাগ এ অভিযানকে ‘রুটিন সমীক্ষা’ বলে দাবি করছে। মূলত কর ফাঁকি ও ট্রান্সফার প্রাইসিং সংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতেই ওই সমীক্ষা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আয়কর দপ্তর।
আয়কর বিভাগের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, জরিপ চলাকালীন শুধু সেই সব কর্মীদেরই বয়ান নেয়া হয়েছে যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন। মূলত অ্যাকাউন্টস এবং কন্টেন্ট ডেভেলপমেন্ট বিভাগের কর্মীদেরই বয়ান নেয়া হয়েছে। ওই মুখপাত্র আরও জানিয়েছেন, সার্ভে চলাকালীন ডিজিটাল ডিভাইস বাজেয়াপ্ত করা হয়নি। বিবিসির সংবাদকর্মীদের মধ্যে যাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে করা হয়েছে, তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে বিবিসি নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে প্রবল আলোচনা চলছে। দেশটির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি এবং মিডিয়া বিশ্লেষকদের একাংশ অভিযোগ করেছে যে, ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে বিবিসি দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র করার পরেই আয়কর বিভাগের এই অভিযান চালানো আসলে সরকারের একটি প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ। যদিও ওই তথ্যচিত্রটি প্রস্তুত করার ব্যাপারে বিবিসির ভারতীয় কর্মীরা জড়িত ছিলেন না আর বিবিসি সেটি বৃটেনের বাইরে প্রকাশও করে নি। তথ্যচিত্রের লিঙ্ক যাতে ভারত সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার না করা যায়, সেই নির্দেশ দিয়েছিল ভারত সরকার।
কিন্তু ভারতের বিভিন্ন সরকার, বিরোধী দল এবং ছাত্রসংগঠন ওই তথ্যচিত্র কোনওভাবে ডাউনলোড করে জনসমক্ষে প্রদর্শন করেছে। দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, হায়দ্রাবাদ সহ বিভিন্ন শহরেই ওই তথ্যচিত্র প্রোজেক্টরে দেখিয়েছে ওইসব সংগঠন। অন্যদিকে তথ্যচিত্রটির জন্য বিবিসির ওপরে ক্ষুব্ধ হয়ে হিন্দুত্ববাদের সমর্থকরা সামাজিক মাধ্যমে প্রচুর পোস্ট করেছেন গত কয়েক সপ্তাহে।