দেশে দারিদ্র্যের হার কত জানা যাবে ৩১ মার্চ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ১২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ০১:৪৩ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দারিদ্র্যের হার নির্ধারণে কাজ করা সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৬ সালের পর এ সম্পর্কিত কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। সংস্থাটির সর্বশেষ ‘হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস) ২০১৬’-এ জাতীয় পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার দেখানো হয়েছে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। দীর্ঘ সাত বছর পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে দেশের সার্বিক দারিদ্র্যের হার। এই সময়ে দারিদ্র্যের হার প্রকাশ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিবিএস। ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর দেশব্যাপী ৭২০টি নমুনা এলাকার ১৪ হাজার ৪০০টি নমুনা খানায় এইচআইইএস জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। রিপোর্ট প্রকাশের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
সেই ধারাবাহিকতায় বিবিএস পরিচালনাধীন এইচআইইএস-২০২২ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনের ট্যাবুলেশন প্ল্যান শীর্ষক কর্মশালা আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সদরদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে বিবিএস মহাপরিচালক মো. মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ফারুক আহম্মেদ ও অতিরিক্ত সচিব (তথ্য ব্যবস্থাপনা) ড. মো. মইনুল হক আনছারী।
এসময় বাংলাদেশে এইচআইইএস জরিপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, নমুনায়ন পদ্ধতি, এইচআইইএস এর নতুনত্ব, সম্পাদিত কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন এইচআইইএস ২০২০-২১ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ। কর্মশালার টেকনিক্যাল সেশনে এইচআইইএস জরিপের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ট্যাবুলেশন প্ল্যানের ওপর বিস্তারিত আলোচনা হয়। টেকনিক্যাল সেশন সঞ্চালনা করেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন) ড. দিপংকর রায়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৩-৭৪ সালে এইচআইইএস পরিচালনা করা হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গুরুত্বপূর্ণ জরিপটি নিয়মিত বিরতিতে পরিচালনা করে আসছে। বিবিএস এ পর্যন্ত মোট ১৬ রাউন্ড এইচআইইএস পরিচালনা করা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিবিএস এইচআইইএস পরিচালনা করেছে। এইচআইইএস কম্পিউটার অ্যাসোসিয়েটেড পারসোনাল ইন্টাভিউইং পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
এ জরিপের তথ্য-উপাত্ত দারিদ্র্য দূরীকরণ, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ পরিবীক্ষণে ব্যবহৃত হবে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলতি বছরের ৩১ মার্চ এইচআইইএস’র প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে। এর মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্যের হার জানা যাবে। প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরির কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে, সেই ধারাবাহিকতায় আমরা কর্মশালা করলাম। আশা করছি ৩১ মার্চের মধ্যেই রিপোর্ট প্রকাশ করবো। দীর্ঘ সাত বছর পর আমরা কাঙ্ক্ষিত রিপোর্ট প্রকাশের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি। ২০১৬ সালের পর সরকার দেশে আর কোনো দারিদ্র্যের হার প্রকাশ করেনি। তবে দেশের দারিদ্র্যের হার নিয়ে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থা নানা ধরনের তথ্য প্রকাশ করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ১ শতাংশ বা ৩ কোটি ৯২ লাখ মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। এ ধরনের দারিদ্র্যের কারণেই মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন।
তবে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনের মাত্রা বেশ ভালো। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য ২০২১ গ্লোবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইন্ডেক্স (এমপিআই)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
অবশ্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনের মাত্রা সমান নয়। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বানানো এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার হ্রাসে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেখা গেছে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত যা ছিল ২১ দশমিক ২৪ শতাংশ। জরিপে যারা সাধারণত দারিদ্র্যসীমার ওপরেই বসবাস করেন, কিন্তু যেকোনো অভিঘাতে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারেন, তাদের নতুন দরিদ্র হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
তবে দেখা গেছে, গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত যেখানে শহরাঞ্চলে নতুন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৫৯ শতাংশ, সেখানে গ্রামাঞ্চলে তা ৪৪ শতাংশ। এ হিসাব থেকে জাতীয় পরিসরে নতুন দরিদ্রের এ হিসাব (১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ) প্রাক্কলন করা হয়েছে।