উমেদার থেকে জমিদার বাগেরহাটের নিউ বসুন্ধরা এমডি মান্নান তালুুুুকদার আবার কারাগারে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৯ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
সুপ্রিমকোর্ট নির্দেশ দেবার তিনমাস পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে একশ দশ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলা কারাগারে গেছেন বহুল আলোচিত উমেদার থেকে জমিদার হওয়া নিউ বসুন্ধারার এমডি আ: মান্নান তালুকদার।
আজ রবিবার সকালে বাগেরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্টেট কোর্টে অত্মসমার্পণ করলে বিচারক স্বপন কুমার সরকার মান্নান তালুকদারকে করাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী এড মিলন কুমার ব্যানার্জী।
সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে ছয় বিচারকের আপিল বেঞ্চ গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার এক আদেশে হাইকোটের দেয়া জামিন স্থগিতাদেশ দিয়ে দুই সপ্তারের মধ্যে আত্মসমার্পণের এ আদেশ দিয়েছিলেন। সেই সময় আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও আসিফ হোসেন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস ও আশরাফ আলী।
বাগেরহাট দুদকের আইনজীবী এড মিলন কুমার ব্যানার্জী জানান, রবিবার সকালেই চিফ জুডিশিয়াল কোর্টে নিউ বসুন্ধধরার এমডি আ: মান্নান তালুকদার আত্নসমর্পণ করেন এবং আদালতের বিচারক স্বপন কুমার সরকার এই সময় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি জানান, লক ডাউনের সময় আদালত বন্ধ থাকায় সে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অত্মসমার্পণ করেননি বলে আদালতেকে জানিয়েছেন।
তার আগে ২০১৮ সালের ৩০ মে বাগেরহাট সদর মডেল থানায় নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেডের এমডি আবদুল মান্নান তালুকদার ও চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা অবৈধ সম্পদ অর্জন, অপরাধব্ধ আয় স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট ১ হাজার শেয়ারের মধ্যে আবদুল মান্নান তালুকদার ৮৫০টি, চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান ৫০টি, তার মা সালেহা বেগম ও স্ত্রী জেসমিন নাহার ৫০টি করে ১০০টির মালিক। প্রকৃতপক্ষে নিউ বসুন্ধরার চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুর রহমানের নাম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন এমডি আবদুল মান্নান তালুকদার।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) আবদুল মান্নান তালুকদার স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে নিউ বসুন্ধরা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি জমি কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার পর তিনি গ্রাহকদের প্রতি লাখে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা করে লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখান।
তিনি বাগেরহাট, খুলনাসহ বেশ কয়েকটি জেলার অন্তত ২০ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৯৯ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেন, যা ব্যাংকিং আইনের পরিপন্থি।
কয়েক বছরে বাগেরহাটের ১৬টি ব্যাংকের ৩০টি (অ্যাকাউন্ট) হিসাবে ১১০ কোটি ৩১ লাখ ৯ হাজার ১৩৫ টাকা ৫৮ পয়সা জমা করেন আবদুল মান্নান। গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তিনি ব্যাংক থেকে তুলে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করলে গত বছরের শেষের দিকে আসামিদের জামিন দেয় হাইকোর্ট। জামিন পেয়ে কারামুক্তও হন তারা। এর মধ্যে দুদক ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে। চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল আনিসুর রহমানকে আত্মসমর্পণ করতে বলে আপিল বিভাগ। সে অনুসারে তিনি আত্মসমর্পণ করে এখন কারাবন্দি।