আগস্টে ১৩১ শিশু ও ১৪৩ নারী নির্যাতনের শিকার : মহিলা পরিষদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৬ এএম, ৩ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
রাজধানীর কদমতলীতে একটি বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন পাঁচ বছরের এক শিশু। পাশাপাশি বাসায় ভাড়া থাকেন জাকির (৪৫) নামে ডেকোরেশন দোকানের কর্মচারী। ১১ আগস্ট বিকেল পাঁচটার দিকে শিশুটি তার বাবার কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে যায় ঝাল মুড়ি খেতে। এর কিছুক্ষণ পর তার সঙ্গে থাকা অন্য শিশুরা বাসায় এসে জানায়, শিশুটিকে ডেকোরেশন দোকানের ভিতর নিয়ে শাটার বন্ধ করে দিয়েছে জাকির। এই কথা শুনে শিশুটির পরিবার ডেকোরেশনে দোকানের দিকে যাওয়ার পথে দেখেন শিশুটি অন্য বাচ্চাদের সাথে বাসার দিকে ফিরছে। তবে সে অসুস্থ বোধ করছিলো। রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে ১১ বছরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক বাক-প্রতিবন্ধি শিশুকে নাজের হোসেন (৩৫) নামে এক ব্যক্তি ফুঁসলিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে নেয়। এরপর নির্জন স্থানে নিয়ে যায় তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় নাজের। পরে ঘটনাটি বুঝতে পেরে শিশুর পরিবার বাঘাইছড়ি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনাটি ২৮ আগস্টের। কয়েক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর এক তরুণীর (২৬) বিচ্ছেদ হয়। এর পর থেকে তিনি সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকেন। এক পর্যায়ে আত্মীয় সেলিম মিয়ার (৩৫) সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়। সেলিম তাকে বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যান। একদিন সেলিম তাকে ধর্ষণ করে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। পরে তাদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেলিমকে বিয়ের কথা বললে তিনি টালবাহানা করতে থাকেন। সর্বশেষ ২৯ আগস্ট ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন এক সন্তানের বাবা সেলিম। এখন ওই তরুণী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। শুধু পাঁচ বা ১১ বছরের শিশু কিংবা ২৬ বছরের তরুণী নয়, দেশে চলতি বছরের আগস্টে ২৭৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ১৩১ জন কন্যাশিশু এবং ১৪৩ জন নারী। এদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০৩ জন। ধর্ষিতদের মধ্যে ৬০ কন্যাশিশু রয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বুধবার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদে সংরক্ষিত ১৩টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে ১৩১ কন্যাশিশু এবং ১৪৩ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৩ জন। ধর্ষিতদের মধ্যে ৬০ কন্যাশিশু। সাত কন্যাশিশু সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার, এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ১৫ কন্যাশিশুসহ ২৬ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এক কন্যাশিশুসহ দুজনের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। ছয় কন্যাশিশুসহ ৯ জন যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। এসিডদগ্ধ হয়েছে একজন। অগ্নিদগ্ধের কারণে মৃত্যু হয়েছে একজনের। এক কন্যাশিশুসহ তিনজনকে উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। ১০ কন্যাশিশুসহ ১২ জনকে অপহরণ এবং এক কন্যাশিশুকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, নারী পাচারের ঘটনা ঘটেছে দুটি। বিভিন্ন কারণে আট কন্যাশিশুসহ ৩০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া দুই কন্যাশিশুসহ ১২ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে আটজন, এর মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তিন কন্যাশিশুসহ মোট ১০ জন। নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছে দুই কন্যাশিশুসহ পাঁচজন। এ ছাড়া দুই কন্যাশিশুসহ তিনজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। ১২ কন্যাশিশুসহ ৩৪ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে একজন। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে চারটি। ফতোয়ার ঘটনা ঘটেছে একটি। এক কন্যাশিশুসহ সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে ছয়জন।