কিছু পুলিশের অপরাধ ভাবাচ্ছে ঊর্ধ্বতনদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৭ এএম, ১৫ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:২৫ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনা মহামারির শুরুর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা লাশ দাফন থেকে শুরু করে বাসায় খাবার পৌঁছে দেয়ার মতো অনেক মানবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে পুলিশ বাহিনী বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তবে কিছু সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে সংস্থাটিকে। সম্প্রতি কিছু পুলিশ সদস্যের অপরাধমূলক কাজ ভাবিয়ে তুলেছে বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও। ১০ আগস্ট ফেনীতে পুলিশ সদস্যদের অসাধু একটি চক্র স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে জিম্মি করে স্বর্ণ লুট করে। এ ঘটনা আলোচিত হয় দেশব্যাপী। ঘটনায় মামলা দায়ের হলে গ্রেফতার করা হয় পুলিশের ছয় সদস্যকে। তারা হলেন- ডিবির পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম, উপপরিদর্শক (এসআই) মোতাহের হোসেন, মিজানুর রহমান, নুরুল হক এবং সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) অভিজিত বড়ুয়া ও মাসুদ রানা। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হন পুলিশের ছয় সদস্য।
তারা হলেন- কনস্টেবল আব্দুল নবী, এসকান্দর হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শাকিল খান, মো. মাসুদ ও মোর্শেদ বিল্লাহ। গাজীপুরে এক অটোরিকশা চালকের কাছ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় হাইওয়ে পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনাটি চলতি বছরের ৭ মে ঘটে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সূত্রাপুর থানাপুলিশের এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পল্টন থানাপুলিশ। ২০ জুন গ্রেফতার করা হয় তাদের। সম্প্রতি পুলিশ সদস্যদের এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়গুলো ভাবিয়ে তুলেছে সব মহলকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরদারির দুর্বলতাতেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। শুধু নজরদারি বাড়ানো নয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারলে অনেকাংশে কমানো সম্ভব পুলিশ সদস্যদের অপরাধ।
সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘পুলিশকে তো আর আইনের বাইরে রাখা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তি কিংবা ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। পুলিশের কোনো সদস্য যখন অভিযুক্ত হয়, অপরাধে জড়িয়ে যায়, তখন তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। অপরাধ প্রমাণে শাস্তিও হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা শুধু একটি ডিপার্টমেন্টের ওপর সীমাবদ্ধ নয়। সবার ভেতরেই জবাবদিহিতা থাকা দরকার। পুলিশের কোনো সদস্য আইনবহির্ভূত কাজ করলে সেটা বাহিনীর জন্য অবশ্যই বিব্রতকর।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘পুলিশের মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের ওপর বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। তারা মাঠে বেশি দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ থাকে। বিশেষ করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও এসআই মামলার তদন্ত ও নিষ্পত্তিতে জড়িত থাকেন। তাদের মধ্যে ক্ষমতার চর্চার প্রবণতা দেখা যায় বেশি। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’
অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান আরও বলেন, ‘শুধু ক্লোজ কিংবা ট্রান্সফার যদিও একটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা, তারপরও বিচার না হলে অনেকেই এ ধরনের অপরাধে উৎসাহী হয়ে পড়বে। কিছুটা কঠিন বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’
পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স শাখার এআইজি সোহেল রানা বলেন, পুলিশ সদস্যদের ভালো কাজে যেমন স্বীকৃতি ও পুরস্কারের আয়োজন রয়েছে, তেমনি কেউ অপরাধ করলে বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে বিভিন্ন মাত্রায় শাস্তির আওতায় আনা হয়। প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও মোটিভেশন দেয়া হচ্ছে।