ভুয়া মামলার বাদীর শাস্তি চান আইনবিদরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৭ এএম, ২০ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৩ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
থানায় বা আদালতে কারো বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ করতে বাদী বা অভিযোগকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) অনুলিপি দাখিল করতে হবে বলে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন তা ভুয়া মামলা ঠেকাতে এবং হয়রানি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যারা বিদেশে থাকেন, ১৮ বছরের কম বয়স, এনআইডি হারিয়ে গেছে এমন অনেক মানুষের বিভিন্ন কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাদের ক্ষেত্রে এটা সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন আইনবিদরা। তাদের মতে এটা হয়তো আদালত চূড়ান্ত পর্যায়ে শুনানির সময় বিবেচনা করবেন। তবে এনআইডি ছাড়া মামলা করার সুযোগ থাকলে যেকোনো মানুষ হয়রানির শিকার হতে পারে। মানবপাচার আইন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ কিছু কিছু আইনে মামলা হলে মামলার চূড়ান্ত শুনানির আগে আসামিকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে ভুয়া মামলার বাদীকে ধরতে এবং হয়রানি ঠেকাতে জাতীয় পরিচয়পত্র অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। গত ১৪ জুন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ৪৯টি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুলসহ এ আদেশ দেন। মামলা বা অভিযোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিচারিক হাকিম বা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এখন থেকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলেন আদালত। ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে রাজধানীর শান্তিনগরের বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি ভুয়া মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে দায়ের করা রিটের শুনানিতে ভুয়া মামলা ঠেকাতে আদালত এ আদেশ দেন। বৃদ্ধ একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯টি মামলার বাদীদের খুঁজে বের করতে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশও দেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) অনুলিপি দাখিল করে মামলা করার ক্ষেত্রে কোনো জটিলতা হবে না। যারা বিদেশে থাকেন তারা পাসপোর্টের মাধ্যমে এবং যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদের পক্ষে আত্মীয়রা মামলা করতে পারবেন। এনআইডি ছাড়া মামলা করার সুযোগ থাকলে যেকোনো মানুষ হয়রানির শিকার হতে পারে।
তিনি বলেন, মানব পাচার আইন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনসহ কিছু কিছু আইনে মামলা হলে মামলার চূড়ান্ত শুনানির আগে আসামিকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হতে পারে। তারপর চূড়ান্ত শুনানির সময় দেখা গেল মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির জীবন থেকে যে একটা সময় চলে গেল তা কে ফিরিয়ে দেবে।
তিনি আরো বলেন, ভুয়া মামলা ও ভুয়া বাদী দুটো দুই বিষয়। একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৪০টি মামলা হলো। তিনি দীর্ঘদিন জেলে থাকলেন। মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত তাকে খালাস দিলেন। এতে কি লাভ হলো। ওই ব্যক্তিকে তো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হলো। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বলেন, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে এনআইডির বাধ্যবাধকতা থাকলে যারা বিদেশে থাকেন তাদের এনআইডি নেই। আর যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদেরও এনআইড নেই। আদালত এনআইডির অনুলিপি দেয়ার কথা বলেছেন এটা চূড়ান্ত নয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়তো আদালত বিষয়গুলো দেখবেন। তবে মামলা করার ক্ষেত্রে এনআইডির কপি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ। আর তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুয়া মামলার বাদীকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া।
আইনজীবীরা জানান, ঢাকার শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা একরামুল আহসান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, মানবপাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ৪৯টি মামলা দায়ের হয়। এসব মামলায় তিনি এক হাজার ৪৬৫ দিন জেল খেটেছেন। কিন্তু একটি মামলারও বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, মারামারির মামলায় ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট সূত্রাপুর থানা পুলিশ একরামুল আহসান কাঞ্চনকে প্রথম গ্রেফতার করে। এরপর দুই বছর তিন মাস তিনি কারাগারে ছিলেন। এর মধ্যে ১৭টি মামলা হয়। পরে ২০১৫ সালের ২১ মে জামিনে বের হয়ে আসেন কাঞ্চন। পরে আরো বিভিন্ন মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। গত বছর অক্টোবরে নারায়ণগঞ্জের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি কারখানার মালিক পরিচয় দিয়ে কাঞ্চনের বিরুদ্ধে ৪৯তম মামলাটি করা হয়। কিন্তু সেই মামলার বাদীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিবেচনায় একরামুল আহসান কাঞ্চন ৩৬ মামলায় খালাস পেয়েছেন। বাকি ১৩ মামলায় তিনি জামিনে আছেন। গত ৭ জুন ৪৯ মামলার গায়েবি বাদীকে খুঁজে বের করতে সিআইডির প্রতি নির্দেশনা চেয়ে একরামুল আহসান কাঞ্চনের পক্ষে আইনজীবী এমাদুল হক বসির এ রিট দায়ের করেন। রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজিপি, পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (এসবি), অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (সিআইডি), র্যাবের মহাপরিচালক, ঢাকার পুলিশ কমিশনারসহ ৪০ জনকে বিবাদী করা হয়। রিট আবেদনে মামলার ভুয়া বাদীদের খুঁজে বের করার নির্দেশনার পাশাপাশি একই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রিট আবেদনকারীর পক্ষে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়।