

খেলাপি ঋণ বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৪৭ এএম, ২ ডিসেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৪০ এএম, ৯ জুন,শুক্রবার,২০২৩

খেলাপি ঋণ বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর ফলে দ্বিতীয়বারের মতো অবলোপনের হিসাব বাদে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা ছাড়ালো। এর আগে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের শেষে প্রথমবারের মতো খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। ব্যাংক খাতে খেলাপি কমাতে ঋণ পরিশোধের জন্য নানা রকম সুবিধা দিয়েও এর লাগাম টানা যাচ্ছে না।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ আবারো এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে ১ লাখ ১৬৮ কোটি টাকায় উঠেছে, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ-সংক্রান্ত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এক লাখ এক হাজার ১৫০ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১২ শতাংশ। করোনার শুরুর বছর ২০২০-এর ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সে হিসাবে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা।
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৯ লাখ ২৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বরের শেষে যা ছিল ৪০ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরের শেষে বিদেশি ব্যাংকের খেলাপি হয়েছে ২ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ১২ শতাংশ। বিদেশি ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত তিনটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা, যা এই অংক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট ৩২ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় গত বছর ঋণগ্রহীতারা কোনো টাকা পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি দেখাতে পারেনি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাস ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে একরকম ছাড় দিয়ে রেখেছে। এই ছাড়ের কারণে চলতি বছর একজন গ্রাহকের যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার কথা, চলতি মাস ডিসেম্বরের মধ্যে তার ২৫ শতাংশ পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না। এরপরও খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ঋণের টাকা আদায়ে ব্যাংকগুলোর বিশেষ কোনো উদ্যোগ না থাকায় খেলাপির পরিমাণ বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, যারা ঋণ নিয়েছে তারা ফেরত দিতে আগ্রহী নয়, আবার সরকারেরও খেলাপি কমানোর বিষয়ে তেমন সদিচ্ছা নেই।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, খেলাপি হলে কোনো শাস্তি হয় না, বরং পুরস্কৃত করা হয়, যার ফলে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।