ছয় মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৬৯ শতাংশ
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:২৩ পিএম, ১২ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২৩ | আপডেট: ১২:১৮ পিএম, ১১ ডিসেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া বাড়িয়েছে সরকার। ঘাটতি বাজেট পূরণে এ ঋণের চাহিদা বাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিট ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নিয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৯ হাজার ১২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণ বেড়েছে ৬৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
তবে সরকারের ঋণ এখন সব কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৬৫ হাজার ৬০৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। এসব ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে পরিশোধ করছে। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৩৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকে সরকারের ঋণ স্থিতি ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৬৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২১ হাজার ৪৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নেয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় সরকারকে ব্যাংকমুখী না হয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তারা বলেন, কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। অন্য দিকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কম হয়েছে। আর সরকারের ব্যয় না কমার কারণে বাধ্য হয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। এ জন্য সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে গেলে মানুষের দুর্ভোগও বেড়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর শেয়ার বিজকে বলেন, সস্তার জন্য সরকার এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। তবে ঋণ বড় ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত। আগের মতো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া উচিত। প্রয়োজনে ঋণের যে ক্যাপ রয়েছে, তা তুলে দেয়া হোক। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদহার কম হওয়ায় বাণ্যিজিক ব্যাংকগুলো এ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে বেসরকারি খাত থেকে ঋণ নিতে হলে সরকারকে বেশি সুদ দিতে হবে। তাই সরকারের ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনে নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ না বেড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেসবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে। এখন যদি ট্রেজারি বিল-বন্ডের মাধ্যমে বাজার থেকে আরও টাকা তুলে নেয়া হয় তাহলে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজই হচ্ছে, মুদ্রানীতি ঠিক রাখার জন্য কখন বাজারে টাকা ছাড়া হবে, আবার কখন টাকা তুলে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাজারে টাকার সরবরাহ বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল-বন্ড নিজেই কিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তা আবার বাজারে ছেড়ে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ৪৩৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত ৩০ জুনে যা ছিল দুই লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে ছয় মাসে সরকারের ব্যাংক ঋণ ৩২ হাজার ২৪৯ কোটি ৩৫ লাখ বেড়েছে। আর গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ নিয়েছিল ১৯ হাজার ১২৮ কোটি টাকা ৬৬ লাখ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। যা ২০২২ সালের একই সময়ে এসে ৩ লাখ ২ হাজার ৪৩৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে ৮১ হাজার ১৯১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বেড়েছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে ভাঙানোর হার বেশি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ব্যাংক, সঞ্চয় ব্যুরো ও ডাকঘরে মোট জমা পড়েছে ৩৪ হাজার ৯৩৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মূল পরিশোধ দাঁড়ায় ৩৬ হাজার ৫৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রথম পাঁচ মাসে নিট ঋণ এক হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণ কমেছে।