করোনার টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ, ১২ দিন পর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪৫ পিএম, ৮ মার্চ,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:৫৯ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
মাদারীপুরে করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ১২ দিন পর ‘করোনার উপসর্গ’ নিয়ে বিল্লাল সরদার (৪৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
গত শনিবার ওই ব্যবসায়ীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
বিল্লাল সরদার সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের মধ্য পেয়ারপুর গ্রামের মৃত সুলতান সরদারের ছেলে এবং চরমুগরিয়া বন্দরের থাই ও অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসায়ী।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সার্ভিলেন্ট অ্যান্ড ইমোনাইজেশন মেডিকেল অফিসার (সিমু) ডা. বিকাশ চন্দ্র দাস, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মহেশ্বর কুমার মণ্ডল, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ইকরাম হোসেন, সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. এইচএম খলিলুজ্জামানসহ স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা এ ব্যাপারে বিল্লাল সরদারের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধনের পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর সদর হাসপাতালে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন ব্যবসায়ী বিল্লাল। পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তার শরীরে জ্বর আসে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়া শুরু করেন তিনি। চতুর্থ দিনেও জ্বরের পাশাপাশি গলা ব্যথা, কাঁশি ও শ্বাসকষ্ট শুরু ছিল।
একপর্যায়ে গত ২ মার্চ শহরের বাবু চৌধুরী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক টিএম শাহিন ইকবালের মাধ্যমে তিনি চিকিৎসা নেন। অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে গেলে তাকে ৬ মার্চ মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করেন পরিবারের লোকজন।
অবস্থার অবনতি হলে গত শনিবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান বিল্লাল। ওইদিন রাত ১১টার দিকে জানাজা শেষে বিল্লালকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এ ব্যাপারে বিল্লাল সরদারের ছেলে সাগর সরদার বলেন, ‘আমার বাবা টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হলে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।’
আজ সোমবার দুপুরে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ইকরাম হোসেন বলেন, ‘তার করোনা নেগেটিভ ছিল। তা ছাড়া ডায়াবেটিক ও হাইপ্রেসারও ছিলো। বিল্লাল সরদারের মৃত্যুর খবর শুনে আমরা তার বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আরও অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’
সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. এইচএম খলিলুজ্জামান বলেন, ‘গত ৫ মার্চ সদর হাসপাতাল থেকে বিল্লাল সরদারের করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ৬ মার্চ করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। টিকা নেওয়ার পর বিল্লাল সরদার মারা যাবার বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিনিধি কাজ করছে। তার অন্য কোনো রোগ ছিল কি না; কিংবা অন্য কোনো কারণে তার মৃত্যু হয়েছে কি না সেগুলো নিয়ে অভিজ্ঞরা মাঠে কাজ শুরু করেছে।’
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৩০ মিনিট হাসপাতালে বিশ্রামের জন্য রাখা হয়। যদি কারো ৩০ মিনিটের মধ্যে অসুবিধে হয় তাহলে নিয়মানুযায়ী স্বাস্থ্যগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিল্লাল সরদার টিকা গ্রহণ করার পর উপসর্গ নিয়ে মারা যাবার বিষয়টি মাথায় নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক টিম কাজ করছে। রিপোর্ট হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য বিভাগের উচ্চ পর্যায়ে অবগত করা হবে। কী কারণে তিনি মারা গেলেন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পরীক্ষার পরে বলা যাবে।’