চার মাসে দেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৬ লাখের বেশি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৪ এএম, ২৩ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:১৩ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চার মাসে দেশে ৬ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে আটজন। গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মহাখালী হাসপাতালে এখন ডায়রিয়া রোগীর চাপ কিছুটা কম। যেখানে মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে দৈনিক এক হাজারের বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখা গেছে।
আইসিডিডিআরবি সূত্র জানিয়েছে, এখন দৈনিক গড়ে ৫০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অবশ্য বরিশাল বিভাগে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা এখনও বাড়তির দিকে লক্ষ করা যাচ্ছে। মার্চ মাসে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় আক্রান্ত হয়েছিল ৫ হাজার ৪১৫ জন। এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৩৭৭ জনে। আর মে মাসের প্রথম ২০ দিনে ৭ হাজার ৬৯০ জন আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারা দেশে মার্চের চেয়ে এপ্রিলে ডায়রিয়ায় বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মার্চে ৬৪ জেলায় মোট আক্রান্ত ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ২৩৭ জন। এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৩৩ জনে। গত ৪ মাসে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৯৪৪ জন। ঢাকা জেলার পর সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ঝিনাইদহ জেলায়। চার মাসে ঢাকা জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ২৭ হাজার ৩৪৩ জন। তবে এই হিসাবের মধ্যে আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া রোগীর তথ্য নেই। এই হাসপাতালে ঢাকা ছাড়াও গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মানুষ চিকিৎসা নেয়। হাসপাতালটিতে এই সময়ে ৮৮ হাজার ৫৯৩ জন চিকিৎসা নিয়েছে। আর ঝিনাইদহ জেলায় আক্রান্ত হয়েছে ২৩ হাজার ৩৩০ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হতে দেখা গেছে লালমনিরহাট জেলায়। উত্তরের এই জেলায় ৪ মাসে ১ হাজার ৫৮১ জন আক্রান্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই হিসাব হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাসপাতালে ভর্তির হওয়া রোগীর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ প্রতি বছর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। অনেকে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা নেয়। অনেকে খাওয়ার স্যালাইন কিনে বা তৈরি করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে ডায়রিয়াজনিত রোগে মানুষের মৃত্যু কমেছে। এর প্রধান কারণ মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে মানুষ নিজ উদ্যোগে চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে যায়। এরপরও সরকারি হিসাবে গত ৪ মাসে ৮ জনের এই পানিবাহিত রোগে মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। এই জেলায় মারা গেছে তিনজন। কক্সবাজার জেলায় মারা গেছে দুজন।
লক্ষ্মীপুর, বান্দরবান ও সুনামগঞ্জ জেলায় একজন করে মারা গেছে। এ বছর মার্চের শুরুর দিকে আইসিডিডিআরবি’র হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের ভর্তি বাড়তে থাকলে ঢাকা শহরের পানির মান নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন দেখা দেয়। আইসিডিডিআরবি অবশ্য ঢাকা ওয়াসাকে পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিল। তবে ওয়াসা বারবার দাবি করে এসেছে, তাদের পানির মান ভালো। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা গত মাসে বলেছিল, ঢাকার কিছু এলাকায় কলেরার টিকা দেয়া হবে। অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, শিগগির সেই টিকা দেয়ার কার্যক্রম হবে।