হালদায় মাত্রাতিরিক্ত লবণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০৬ এএম, ২৮ মে,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৪৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং ‘পূর্ণিমা’র প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারে লবণের আগ্রাসন হয়েছে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদায়। এ কারণে বুধবার অনুকূল পরিবেশ থাকলেও ডিম দেয়নি রুই জাতীয় (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) মাছ। দুই দফা নমুনা ডিম (ডিম দেওয়ার আগে নদীতে অনুকূল পরিবেশ আছে কি না অল্প ডিম দিয়ে পরীক্ষা করে মা মাছ) দিয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় বলছে, সহনীয় মাত্রার চেয়ে হালদায় জোয়ারের পানিতে ৭৭ গুণ বেশি লবণ পাওয়া গেছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় পাওয়া গেছে ৩৬ গুণ বেশি। নদীতে লবণের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে ডিম ছাড়া নিয়ে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ কারণে আজ প্রায় ৩৫০ নৌকা নিয়ে ১৫০০ ডিম সংগ্রহকারী অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত ডিমের সন্ধ্যান পায়নি। শুধুমাত্র কিছু ডিম সংগ্রহকারী কয়েক কেজি করে ‘নমুনা ডিম’ সংগ্রহ করেছে।
ডিম সংগ্রহকে ঘিরে গতকাল হালদা পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমানসহ হালদা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী হাটহাজারীর গড়দুয়ারা এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, মঙ্গলবার মধ্যরাত এবং বুধবার দুপুরে হালদায় দুই দফায় নমুনা ডিম দিয়েছে মা মাছ। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত নবণের আগ্রাসন থাকায় পূর্ণাঙ্গ ডিম দেয়নি। ঘুর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং ‘পূর্ণিমা’র প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারের সাথে অতিরিক্ত লবণ পানি প্রবেশ করেছে। এতে মিঠা পানির মা মাছ ডিম ছাড়েনি। জীবন বাঁচাতে উজানের দিকে উঠে যায়।
কামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, বুধবার নদীতে আমার ৬টি নৌকা ছিল। সব নৌকা মিলে ৩০ কেজির মত ডিম পেয়েছি। এসব ডিম কুয়াতে ফেলেছি’।
হালদার পানিতে অতিরিক্ত লবণ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ওয়াসার ল্যাবরেটরি টেস্টে হালদার পানিতে ৩১ মিলিগ্রাম পার লিটার ক্লোরাইড পাওয়া গেছে। যেখানে সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম পার লিটার। এ কারণে ওয়াসা দৈনিক ৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। জোয়ারের সময় পানি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে’।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় হালদার পানিতে ৩৬ পিপিটি লবণ পাওয়া গেছে। এটির সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ১ পিপিটি’।
ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এবং ‘পূর্ণিমা’র প্রভাবে সামুদ্রিক জোয়ারে লবণের মাত্রাতিরিক্ত আগ্রাসন বেড়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ কারণে রুই জাতীয় মা মাছ ডিম ছাড়ছে। তারপরও আমরা আশা করি, এ সমস্যা কেটে যাবে। হালদাতে এবার যে কোন বারের চেয়ে বেশি ডিম ছাড়বে মা মাছ। কারণ এবার উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-পুলিশ বেশি সক্রিয় ছিল। তুলনামূলক দূষণও কম ছিল’।
জেলা মৎস্য অফিসার ফারহানা লাভলী বলেন, নদীতে দুই দফা নমুনা ডিম দিয়েছে। কাল ডিম দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে ডিম সংগ্রহকারীরা সবাই নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে নদীতে অপেক্ষা করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সরকারি ৪টি হ্যাচারির প্রায় ১৫০টি কুয়াও’।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, ডিমের জন্য হালদায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এমনকি মা মাছ রক্ষায় ভাটি এলাকা ছাড়াও উজানে নাজিরহাট পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিজে দফায় দফায় হালদায় যাচ্ছি। বুধবার বিকেলে জেলা প্রশাসক মো. মুমিনুর রহমান হালদা পরিদর্শনে করেন। তিনি ঘোষণা দেন যে, হালদা রক্ষায় প্রশাসন সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাবে’।