ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত সেন্ট মার্টিনের একমাত্র জেটি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১৩ পিএম, ২৬ মে,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:২৬ পিএম, ৫ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিনের একমাত্র পর্যটক জেটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে দৈনিক ৫ থেকে ১২ হাজার পর্যটক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এই জেটি দিয়ে জাহাজে ওঠানামা করতেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ মে) রাত থেকে ঘূর্ণিঝড় ও জোয়ারের পানির উত্তাল ঢেউ জেটিতে আঘাত করতে থাকে। এতে জেটির পন্টুনে ফাটল দেখা যায়। আজ বুধবার সকালে উত্তাল সাগরের ঢেউ আঘাত হানলে জেটির অধিকাংশ পন্টুন, রেলিং ও সিঁড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূর আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র জানায়, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বাসিন্দা ও দ্বীপে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সুবিধার্থে ২০০২-০৩ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে এই জেটি নির্মাণ করা হয়। এর দৈর্ঘ্য ৩০০ মিটার। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। জেটি দেখভালের দায়িত্ব উপজেলা এলজিইডির।
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে জেটির পার্কিং পয়েন্ট সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও দুটি গাডার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন থেকেই জেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। প্রতিবছর জেলা পরিষদ এই জেটি ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোনো ধরনের মেরামতকাজে হাত দেয়নি।
তবে গত বছর কিছু টাকা ব্যয় করে দুই পাশে দুটি লোহার পন্টুন স্থাপন করে। এই জেটি ব্যবহার করে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌপথে ১০টি জাহাজ পর্যটক পরিবহন করে আসছিল।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ও রেডিও নাফের কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা এই জেটি ব্যবহার করতেন। ইজারাদার টোল আদায় করে গেলেও কোনো ধরনের মেরামতকাজ না করায় জেটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেল।
টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলম বলেন, সাগর উত্তাল হয়ে পড়ায় গত রোববার দুপুর থেকে আজ পর্যন্ত টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
এভাবে চলতে থাকলে দ্বীপে তরিতরকারিসহ খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দিতে পারে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পূর্ণিমার জোয়ারও। এ নৌপথে চলাচলকারী পর্যটকবাহী জাহাজসহ ৪৭টি সার্ভিস ট্রলার, ৩৩টি গান বোট ও ৪৫টি স্পিডবোট পর্যটক পরিবহন করে আসছিল।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দ্বীপের দক্ষিণ সৈকতে ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও দ্বীপের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ও পশ্চিম সৈকতের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু গাছপালা, হোটেলের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে গেছে। দ্বীপের চারদিকে লোনাপানি প্রবেশ করায় মিষ্টি পানির সংকট হতে পারে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভেজ চৌধুরী বলেন, জেটিটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছিল। অবশেষে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। জেটি বিধ্বস্ত হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হচ্ছে।