ভারতীয় আমদানি করা নিম্নমানের চাল ফের খালাস শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২১ পিএম, ২৪ মে,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:১৮ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ভারতীয় আমদানি করা অতিরিক্ত ভাঙা-খুদ ও নিম্নমানের কারণে খালাস বন্ধ করা সেই এমভি ড্রাগনের চাল পুনরায় খালাস করা শুরু হয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনেই চাল খালাস করা হচ্ছে বলে জানান খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যৌথ সমন্বয়ে জাহাজ থেকে নিম্নমানের চাল বাছাই করা হয়। তারপরও সাইলো জেটিতে পুনরায় হুক (বোম্বা) মেরে যাচাই-বাছাই ও গুণগত মান পরীক্ষা করেই খালাস করা হচ্ছে।
গত শনিবার রাত থেকে খালাস পক্রিয়া শুরু হয়। খালাস করা এই চাল নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা। চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু নঈম মো. শফিউল আজম বলেন, চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মন্ত্রণালয়ের টিম ও সার্ভেয়ার মিলে জাহাজেই বাছাই করা হয়েছে। বাছাই করা চাল সাইলো জেটিতে পুনরায় বাছাই করে খালাস করা হচ্ছে।
নিম্নমানের চালের পরিমাণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা আমাদের বিষয় নয়। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিষয়। আমরা সরকারি নির্দেশনা মতো শতভাগ ভালোমানের চাল গ্রহণ করবো।
খাদ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ৪ মে ভারতীয় আমদানি করা চালবাহী এমভি ড্রাগন চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। ৭ মে বন্দর জেটিতে ভিড়ে। ওই দিন চাল খালাস শুরু হয়। খালাসের সময় নিম্নমানের চাল আমদানি ধরা পড়ায় খালাস বন্ধ করে দেয় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এরপর চালবাহী সেই জাহাজটি বন্দর জেটি থেকে বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
খাদ্য বিভাগ জানায়, ২০ হাজার ৩৩৫ মে. টন চাল নিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছে এমভি ড্রাগন। ৫০ কেজি ওজনের প্রায় ৪ লাখ বস্তা চাল ছিল। প্রথম দফায় ১০-১২ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৫ টন) চাল খালাস হয়েছিল। এরপর অতিরিক্ত ভাঙা ও খুদ (অতিরিক্ত ভাঙা চাল) হওয়ার কারণে খালাস বন্ধ করে দিয়েছিল খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য অধিদপ্তরের জেটি খাদ্য অফিসের সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. ফরিদুল আলম বলেন, সাইলো জেটি দিয়ে চাল খালাস করা হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও চাল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে তিনটি টিম সেখানে আছেন। বোম্বা (হুক) মেরে যাচাই-বাছাই করেই খালাস করা হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাঙা, খুদ ও নিম্নমানের চালের বস্তাগুলো লাল দাগ দিয়ে ক্রস দেওয়া হচ্ছে। এসব চাল কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না।
খাদ্য কর্মকর্তা ও পরিবহন ঠিকাদার সূত্র জানায়, অদৃশ্য কারণেই নিম্নমানের চালগুলো খালাস করা হচ্ছে। এনিয়ে বিপত্তিতে পড়তে হবে খাদ্য বিভাগকে। তারা বলেন, চালগুলো হালিশহর ও দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদামে রাখা হচ্ছে।
খাদ্য ও পরিবহন ঠিকাদারসহ অন্তত ৫-৬ জনের সঙ্গে গতকাল কথা হয়। তারা বললেন, অদৃশ্য কারণে চালগুলো খালাস করা হচ্ছে। ভালোমানের চালের সঙ্গে কিছু কিছু খারাপ ও নিম্নমানের চালও খালাস হচ্ছে। এই চাল নিয়ে পরবর্তীতে বেকায়দায় পড়বে খাদ্য বিভাগ। আমদানি করা এই চাল সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে খাদ্যবান্ধব বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণ করবে।
আমদানি করা এসব চাল চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন খাদ্য গুদামে সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু চালগুলো নিয়ে সন্দেহ থাকায় তা নগরীর হালিশহর ও দেওয়ানহাট সিএসডি খাদ্য গুদামে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
হালিশহর খাদ্য গুদামের ম্যানেজার থোয়াই প্রু মারমা বলেন, ‘নিম্নমানের চাল আমরা রিসিভ করব না। হুক মেরে যাচাই করে রিসিভ করব।’ প্রায় দুই লাখ বস্তা চাল কীভাবে যাচাই করবেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে প্রতিটি বস্তায় হুক মেরে যাছাই করা হবে।
গত শনিবার ১৫ ট্রাক চাল খালাস করা হয়েছে। কী পরিমাণ চাল চিহিৃত করা হয়েছে জানতে চাইলে জেটি খাদ্য অফিসের সহকারী ফরিদুল আলম বলেন, এখনো এ বিষয়ে রিপোর্ট পাইনি।
খাদ্য বিভাগ জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি চট্টগ্রামে রয়েছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।