নালিতাবাড়ীতে প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে পৌনে ২ কোটি টাকা প্রনোদনা বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৪৫ এএম, ২২ মে,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ১১:৫৯ এএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিচালিত 'দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন ও প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন' প্রকল্পের প্রণোদনার প্রায় পৌণে ২কোটি টাকা বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় উপজেলা পর্যায়ে সুফলভোগী নির্বাচন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভা বয়কট করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
গত ১৯ মে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হেলেনা পারভীনের সভাপতিত্বে চলমান সভা বয়কট করে বেরিয়ে আসেন উপজেলার ১২ ইউপি চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও স্থানীয়সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি।
জানা গেছে, দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং প্রাণীসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে গেল ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৫বছর মেয়াদী প্রকল্প চালু করে প্রাণীসম্পদ বিভাগ। এ প্রকল্পের অধীনে গরু, লেয়ারমুরগী, ব্রয়লারমুরগী, সোনালীমুরগী ও হাঁসখামারীদের মাঝে সংখ্যা অনুযায়ী সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রণোদনা প্রদান করে সরকার। এ প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ১ হাজার ৭৩০ জন তালিকা ভূক্ত হয়। তবে নানা জটিলতায় তালিকা ভুক্তদের মধ্যে প্রায় পৌণে ২শ খামারী সরকারী প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়।
এদিকে গেল এপ্রিলে নালিতাবাড়ী উপজেলায় নতুন করে ৯৭০জন খামারী অন্তর্ভূক্তি করণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যেই গেল প্রণোদনার তালিকা প্রণয়ন ও অর্থ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন অনেকেই। মাঠ পর্যায়ে তদন্তকরে দেখা গেছে, প্রকৃত খামারী নন এমনসব ব্যক্তিরাও খামারীর অন্তর্ভূক্ত হয়ে প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন। আবার অনেকেই প্রকৃত খামারী হওয়া সত্বেও পাননি প্রণোদনা।
শুধু তাই নয়, খামারীর নামে বরাদ্দকৃত অর্থ পেতে কারও অর্ধেক বা সিংহভাগ টাকা কমিশন দিতে হয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। এমতাবস্থায় পরবর্তী বরাদ্দের তালিকা প্রণয়নে বাধসাধেন স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিসহ নির্বাচিত জন প্রতিনিধিরা।
এমতাবস্থায় গত বুধবার উপজেলা পর্যায়ে সুফল ভোগী নির্বাচন ও বাস্তবায়ন কমিটি জনপ্রতিনিধি এবং নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ১৩জন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিরা আগে বাস্তবায়িত প্রকল্পের তদন্ত করে পরবর্তী তালিকা তৈরীতে স্বচ্ছতার দাবীতে তাদের সাথে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে খামারী অন্তর্ভূক্তি করণের প্রস্তাব করেন। কিন্তু কমিটির সভাপতি তাদের প্রস্তাবে দ্বিমত পোষণ করেন। এমতাবস্থায় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধিরা সভা বয়কটের ঘোষণা দিয়ে বেরিয়ে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটনের নামে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩ হাজার টাকা। এমন চিত্র পুরো উপজেলা জুড়েই।
বৈঠকে উপস্থিত পৌর মেয়র আবুবক্কর সিদ্দিক ও রাজনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ বকুল জানান,আমরা ঘটে যাওয়া অনিয়মের তদন্ত ও পরবর্তী বরাদ্দ অনুযায়ী নতুন তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতার জন্য আমাদের সাথে সমন্বয়ের প্রস্তাব দিলে কমিটির সভাপতি তা মানতে রাজী হননি। তাই আমরা সভা বয়কট করে চলে আসি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ও উপজেলা পর্যায়ে সুফলভোগী নির্বাচন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডাঃ মতিউর রহমান জানান, জনপ্রতিনিধিরা কমিটির অন্তর্ভূক্ত নন। যেহেতু তাদের সাথে সমন্বয় হয়নি তাই নিয়মানুযায়ী আমরা কমিটির সদস্যদের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করব। অনিয়মের বিষয়ে তিনি জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেহেতু মাঠ পর্যায়ে মাঠকর্মীরা কাজ করেছেন সেক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে।
উপজেলা পর্যায়ে সুফলভোগী নির্বাচন ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেলেনা পারভীন জানান, কমিটির সদস্যদের নিয়ে আমরা নীতিমালা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারা একমত হতেনা পারলে সেটা তাদের বিষয়। আগেও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ হয়েছে।