মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুরে আ'লীগ নেতাদের হাতে স্পিডবোটের নিয়ন্ত্রণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৯ পিএম, ৬ মে,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৯ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
মুন্সিগঞ্জ ও মাদারীপুরের স্পিডবোট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় ‘অবৈধভাবে’ স্পিডবোট চলাচল করে। ‘সিন্ডিকেট’ করে যাত্রীদের কাছ থেকে চড়া ভাড়া আদায় করা হয় এবং কম মূল্যে ঘাট ইজারাও নেন তাঁরা।
অবশ্য এ কাজে তাঁদের সহায়তা করেন স্থানীয় প্রশাসন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও নৌ পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা। ঘাট থেকে আসা অর্থের একটি অংশ তাঁরা পান বলে অনিয়ম নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
ঘাটকেন্দ্রিক বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবশ্য গত সোমবার স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ‘লকডাউন’ শেষে যাদের অনুমোদন থাকবে না, তাদের চলতে দেওয়া হবে না।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রামে যাতায়াতের বড় একটি নৌপথ শিমুলিয়া এবং বাংলাবাজার ও মাঝিরঘাট। এ রুটে ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন করা হয়। সাধারণ সময়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ এ তিন ঘাট দিয়ে স্পিডবোটে চলাচল করে। কারণ, এ নৌযানে পদ্মা পার হতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট।
তিনটি ঘাটকে কেন্দ্র করে প্রায় ৪৫০টি স্পিডবোট চলাচল করে। স্থানীয় প্রশাসন, স্পিডবোটের মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের স্পিডবোট নিয়ন্ত্রণ করেন মেদেনীমণ্ডল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন খান। তাঁর ছোট ভাই শাহ আলম খান এ ঘাটের ইজারাদার।
আশরাফ হোসেন খান বলেন, ‘অবৈধ হলে সরকারি সংস্থা ঘাট ইজারা দেয় কী করে? কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইজারা নিয়েছি। তাই স্পিডবোট চলছে।’
মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটের স্পিডবোট চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার, যিনি পাঁচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। এ ঘাটের ইজারাদার ইয়াকুব ব্যাপারী, যিনি কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘নিয়ম মেনেই আমরা স্পিডবোটে যাত্রী পরিবহন করছি। স্পিডবোট চলাচলে স্থানীয় প্রশাসনই আমাদের সহযোগিতা ও অনুমতি দিয়ে থাকে।’
শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিরঘাটের স্পিডবোট চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেন পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নেছার উদ্দিন মাতবর ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন খান। এ ঘাটের ইজারা পান আলতাফ হোসেন খানের ভাই মনির হোসেন খান।
মুঠোফোনে আলতাফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা ইজারা বাবদ যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে নিই। আর স্পিডবোট বৈধ-অবৈধর বিষয়টি প্রশাসনই ভালো বলতে পারবে।’
একটি স্পিডবোটের একটি ট্রিপে ধারণক্ষমতাভেদে ২২ থেকে ৩২ জন যাত্রী নেওয়া হয়। একজন যাত্রীর কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নেওয়া হয়। দিনে এ রুট দিয়ে কত মানুষ যাতায়াত করে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায়নি।
স্পিডবোটমালিক ও চালকেরা জানান, প্রতি টিকিটের বিপরীতে ঘাটভেদে ২৫ থেকে ৫০ টাকা কেটে রাখেন ইজারাদারের লোকজন। এ ছাড়া সিরিয়াল দিতেও প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নেওয়া হয়। এ টাকার ভাগ চলে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে।
বিআইডব্লিউটিএর একটি সূত্র জানায়, গত বছর শিমুলিয়া ঘাটের ইজারামূল্যও কমেছে। সিন্ডিকেট করে এ মূল্য কমানো হয়েছে। ঘাটের ইজারা থেকে সরকার পেয়েছে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, আগের বছর তা ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকা।