বাসে আগুনঃ ৫ থানায় ৯ মামলা, আসামি ৪৪৬: রিমান্ডে ১৭ জন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ এএম, ১৪ নভেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:৫০ পিএম, ২২ ডিসেম্বর,রবিবার,২০২৪
ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচন চলাকালে রাজধানীর বিভিন্নস্থানে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিভিন্ন থানায় করা মামলা মোট ১৭ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে শাহবাগ থানার দুই মামলায় ৬ জনের ৩ দিন করে; পল্টন থানার এক মামলায় ৭ জনের ৫ দিন করে; আরেক মামলায় ২ জনের ৩ দিন করে; এছাড়া মতিঝিল থানার এক মামলায় একজনের ৩ দিন ও অপর আরেক মামলায় আরেকজনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আজ শুক্রবার ঢাকার মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা বিভিন্ন মেয়াদে আসামিদের রিমান্ড আবেদন করেন। এরপর শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
গত বৃহস্পতিবার বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৫ থানায় ৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৪৪৬ জনকে। আটক করা হয়েছে ২০ জনকে। আসামিদের বেশিরভাগ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। মতিঝিল থানায় করা মামলায় আসামিদের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির পরাজিত প্রার্থী ইশরাক হোসেন রয়েছেন। মামলার এজাহারে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাগুলো করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিও রয়েছেন। পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো করেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন জানান, গত বৃহস্পতিবার বাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মতিঝিল, শাহবাগ ও পল্টনসহ মোট ৫ থানায় ৮টি মামলা করা হয়েছে। মতিঝিলে ২টি, শাহবাগে ২টি, পল্টনে ২টি এবং বংশাল, ভাটারায় ও কলাবাগানে একটি করে মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার এসব মামলা হয়।
গতকাল ও আজ মোট ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে মতিঝিলে ১ জন, শাহবাগে ৬ জন, পল্টনে ৯ জন, বংশালে ২ জন ও কলাবাগানে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টার মধ্যে একে একে ৯টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া বাসের মধ্যে ৩টি সরকারি। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উত্তর পাশে পার্ক করে রাখা একটি সরকারি বাসে প্রথম আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১টার দিকে মতিঝিল থানাধীন মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাস (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৭৫১৫), ১টা ২৫ মিনিটে রমনা হোটেলের সামনে চলন্ত গাড়ি (ঢাকা-মেট্রো-গ-১৫-০৫৮৯) ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনে, শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে দেড়টার দিকে দেওয়ান পরিবহন (ঢাকা-মেট্রো-ঘ-১৩-১৫৭২), ২টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ সচিবালয়ের উত্তর পাশে রজনীগন্ধা পরিবহন (ঢাকা-মেট্রো-ব-১২-০৬৪৪) এবং বংশাল থানাধীন নয়াবাজার এলাকায় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে দিশারী পরিবহনে (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৯২৫৫) অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এদিন দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে পল্টন থানাধীন এলাকায় জৈনপুরী পরিবহন (চট্ট-মেট্রো-জ-১১-০৭১৮), ৩টায় মতিঝিল থানাধীন পূবালী পেট্রল পাম্প সংলগ্ন দোতলা বিআরটিসি বাসে (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৫-৫০০১), ভাটারা থানাধীন কোকাকোলা মোড়ে ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহনে (ঢাকা-মেট্রো-ব-১৫-৫৩২৫) দুষ্কৃতকারীরা আগুন দেয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় ভাটারা এলাকায় আরেকটি বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। রাতে আরও একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে বাসগুলোতে আগুন লাগিয়ে দ্রুত পালিয়ে গেছে। যেসব বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, তাতে ৩ থেকে সর্বোচ্চ ১২ জন যাত্রী ছিলেন। ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে (গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়) কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে বলে দাবি করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ। ঘটনার প্রতিবাদে বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে পৃথক প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করা হয়। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই ন্যক্কারজনক ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ও উদ্দেশ্যমূলক। তিনি দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।