জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা এবারও হবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০৬ পিএম, ২৫ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আব্দুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলার আয়োজনটি গত বছরের মতো এ বছরও গ্রাস করে নিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। বলীখেলার এ আয়োজনটি ১১২ বছরের ইতিহাসে এই নিয়ে পরপর দু’বার বন্ধ রাখতে হলো। বলীখেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ১০ হাজার ব্যবসায়ীর শত কোটি টাকার ব্যবসা আবারো পণ্ড হলো করোনার ভয়াল থাবায়।
এ বছরও যে আয়োজনটি হচ্ছে না তা গত মার্চ মাসে সংবাদ সম্মেলন করে জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজক কমিটি জানিয়ে দেয়।
চট্টগ্রামের মানুষের সবচেয়ে বড় উৎসব এটি। আয়োজনটি নগরবাসীকে আনন্দের উপলক্ষ এনে দেয়। মঞ্চে বলীদের শক্তি আর কৌশলের লড়াই। চারপাশে হাজারো দর্শকের উল্লাস। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জব্বারের বলি খেলার এই চিরচেনা ছবি গতবারের মতো এবারও দেখা যাচ্ছে না। একই ভাবে সারা বছর অপেক্ষায় থাকা চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের বৈশাখী মেলাও এবার বসেনি। তাতে চট্টগ্রামবাসী স্বভাবতই আশাহত।
একই সাথে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মেলায় অংশ নেয়ার অপেক্ষায় থাকা মৌসুমী ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। কারণ শুধুমাত্র জব্বার মিয়ার বলী খেলা উপলক্ষেই সারা বছর ঋণ নিয়ে, ধারদেনা করে নানা ধরনের তৈজসপত্র তৈরি করে থাকেন স্বল্প আয়ের মানুষগুলো।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী বলেন, গত বছর ১১১তম আসর হওয়ার কথা ছিল। এবছরও করতে পারিনি ওই একই কারণে। পরিস্থিতি এখন এমন উদ্বেগজনক পর্যায়ে আছে, প্রধানমন্ত্রী জনসমাগম এড়ানোর কথা বলেছেন। এই প্রেক্ষাপটে আমরা বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মেলা আয়োজক কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ জামাল হোসেন বলেন, পুরো বাংলাদেশ থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এ মেলায় অংশ নিতে আসে। প্রায় প্রতিটি জেলার বিখ্যাত উপকরণগুলো নিয়ে দোকানিরা অংশ নেয় প্রাণের মেলায়। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলায় অন্তঃত দশ হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অংশ নেয়, আর নগরীর ৬০ লাখ মানুষ মেলায় কিছু না কিছু কিনে। প্রত্যেকে গড়ে ২০০ টাকার বাজার করলেও এ ক্ষতি শত কোটি টাকার উপরে।
তরুণ মৃৎ শিল্পী সুবোধ পাল সাভার থেকে এ বৈশাখী মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন ৫ বছর ধরে। সাভারে বসবাসরত এ মৃৎশিল্পী জানান, জব্বার সাহেবের বলী খেলার মেলা নিয়ে আমার পরিবারের আত্মার সম্পর্ক রয়েছে। বাবা অমর কৃষ্ণ পাল প্রায় এক যুগ ধরে এখানে ব্যবসা করেছেন। সুবোধ জানালো গত বছর প্রস্তুতি নিয়ে শেষ পর্যন্ত পণ্ড হলো। এবছর ঘুরে দাঁড়াবেন ভেবে গত ছয় মাস ধরে তারা এ মেলায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এবারও ভগবান মুখ তুলে চাইলেন না।
চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা লোক সংস্কৃতি বিশ্বায়নের ফলে লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ সংস্কৃতি হাজার বছরের ঐতিহ্য সম্বলিত। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা জব্বার মিয়ার বলী খেলা ও বৈশাখী মেলায় আর যেন ছেদ না পড়ে কখনো। সগৌরবে বেঁচে থাক এ মেলা হাজার বছর। এ লোক সংস্কৃতি রক্ষা করতে হবেতো আমাদেরই।