ঝিনাইদহে করোনাকালে প্রানী সম্পদ বিভাগের প্রণোদনার টাকা কারা পেলেন?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৮ পিএম, ২০ এপ্রিল,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪২ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
করোনাকালে খামারীদের সচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য তালিকা করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে যাদের কোন গুরু ছাগল বা মুরগী খামার নেই এমন ব্যক্তিরা প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। এ নিয়ে গ্রামে গ্রামে ক্ষোভ ও অসন্তাষ ধুমায়িত হচ্ছে। তবে ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার অফিস থেকে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, করোনাকালে খামারীদের তালিকা তৈরী করতে ঢাকা থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশ পেয়ে প্রাণী সম্পদ বিভাগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কর্মীরা তালিকা প্রস্তুত করে অনলাইনে ঢাকায় পাঠিয়ে দেন। খবর জানাজানি হয়ে পড়লে রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীরা সরব হয়ে ওঠেন।
গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গরু ছাগল বা মুরগীর খামার নেই এমন ব্যক্তিরও তালিকা পাঠাতে চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে সচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য তালিকা তৈরীতে ছেদ পড়ে। শৈলকুপা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের মনোয়ারা খাতুন অভিযোগ করেন তার মেয়ে রোজি আক্তারের পোল্ট্রি মুরগীর খামার ছিল। করোনাকালে তার সাড়ে ৪ হাজার মুরগী মারা যায়। তার গ্রামের অনেকেই প্রথম ধাপে প্রণোদনার টাকা পেলেও তার মেয়ে পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শৈলকুপার ফুলহরি, আবাইপুরের কুমিরাদহ ও কৃপালপুরে বেশ কিছু ব্যক্তির গরু না থাকলেও তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শৈলকুপায় প্রথম ধাপে ২৮৯০ জন টাকা পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেতে শৈলকুপার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খানের মুঠোফোনে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের বংকিরা গ্রামে আদল বিশ্বাস, বলয় ঘোষ, তাজুল ইসলাম ও মতিয়ার রহমান মতির গরুর খামার থাকলেও তারা টাকা পাননি। করোনাকালে ১০/১২টি গরু নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন। অথচ ওই গ্রামে যাদের ১টা গরু আছে তারাও পেয়েছেন এই টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা জেলায় প্রণোদনার টাকার তালিকা সচ্ছ ভাবে করা হয়নি। সমাজের প্রভাবশালী ও নেতাকর্মীদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এই তালিকা করা হয় বলে অহরহ অভিযোগ আসছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, ঢাকা থেকে তালিকা চেয়ে পাঠানো হলে আমরা প্রথম ধাপে ১২ হাজার ৬৪৬ জনের তালিকা পাঠায়। তার মধ্যে ১২ হাজার ৪৮৮জনের টাকা এসেছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা তালিকাভুক্ত ব্যাক্তিদের বিকাশ বা নগদ একাউন্টে চলে এসেছে।
তিনি বলেন তালিকা করতে কোন সেচ্ছোচারিতা বা অনিয়ম হয়নি। তারপরও বলবো ঝিনাইদহের মানুষরাই তো সরকারী এই টাকা পেয়েছে। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন খামারী হয়েও টাকা পাননি এমন একজন ব্যক্তির নাম আমাকে দেন। তিনি বলেন দ্বিতীয় ধাপে আরো ৭ হাজার ৩২৪ নের তালিকা পাঠানো হচ্ছে। আশা করি বাদপাড়ারা এই তালিকায় স্থান পাবেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের ভোটার আইডির সঙ্গে মোবাইল সিমের মিল নেই। ফলে এমন অসঙ্গতি থাকা ব্যক্তিদের প্রণোদনার তালিকায় নাম থাকলেও তারা টাকা পাচ্ছেন না। ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে মোবাইল সিম ও বিকাশ একাউন্ট মিলে গেলে তারা টাকা পাবেন।
তাছাড়া গ্রামে যখন প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মীরা তালিকা করতে যান তখন তাদের সঙ্গে অসৌজন্য মূলক আচরণ বা বিষয়টি একেবারেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে গৃহকর্তারা এড়িয়ে যান। কেও কেও মোবাইল নং দিলেও তা বিকাশ বা নগদ একাউন্টের সঙ্গে মিল নেই। ফলে তালিকা করা হলেও প্রণোদনার টাকা পান না।