পেটে গজ রেখে সেলাইয়ে মৃত্যু : সেই ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৮ এএম, ১৬ এপ্রিল,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৬ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
কুমিল্লার দেবিদ্বারে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটে গজ রেখে সেলাইয়ের ৫ মাস পর গৃহবধূ শারমিন আক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় ৩ চিকিৎসকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে ওই প্রসূতির বাবা দেবিদ্বার উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোবারক হোসেন বাদী হয়ে দেবিদ্বার থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় অপারেশনকারী সার্জন ও দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. রোজিনা আক্তার, ওই প্রাইভেট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীমা আক্তার লিন্টা, এনেসথেসিয়া চিকিৎসক ডা. মেহেদুল হাসান পারভেজ, হাসপাতালের চেয়ারম্যান নজির আহমেদ ও গ্রাম্য চিকিৎসক সফিকুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান। এর আগে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে থাকা অবস্থায় ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত বছরের ৫ নভেম্বর মুরাদনগর উপজেলার মোগসাইর গ্রামের রাসেল মিয়ার স্ত্রী শারমিন আক্তারকে দেবিদ্বার আল ইসলাম হসপিটালে সিজারিয়ান অপারেশন করেন ওই হাসপাতালের খন্ডকালীন চিকিৎসক ডা. রোজিনা আক্তার ও তার সহযোগী ডা. শামীমা আক্তার লিন্টাসহ অন্যান্যরা। জন্ম হয় ছেলে সন্তানের। গত ৯ নভেম্বর তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়।
বাড়ি ফেরার পর ব্যথা আরও বেড়ে গেলে তাকে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা প্রচুর ওষুধ খেতে দেন। কিন্তু তার জীবন সংকটাপন্ন দেখে গত ৬ এপ্রিল জেলার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট জেনারেল হাসপাতালে তার অপারেশন করে পেট থেকে গজ বের করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় গত শনিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে তাকে ঢাকার একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে প্রথমে আইসিইউতে ও পরে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওই প্রসূতির স্বামী রাসেল মিয়া জানান, ভুল চিকিৎসায় আমার স্ত্রীকে হারাতে হলো, দুটি শিশু সন্তান তাদের মাকে হারালো। এ ব্যাপারে আল ইসলাম হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোহাম্মদ হোসেন (এনাম) বলেন, ওই প্রসূতির দুটি অপারেশন হয়েছে। এ বিষয়ে যেহেতু দুটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে, সেহেতু কার অপারেশনের ভুলে এ রোগীর মৃত্যু হয়েছে তা তদন্তে বের হবে। মুঠোফোনে অপারেশনকারী সার্জন ডা. রোজিনা আক্তার বলেন, ৫ মাস আগে প্রসূতি শারমিনের সফল অপারেশন করার পর সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে যায়। পরে সে তার সমস্যার কথা তাকে কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেনি। এছাড়াও ময়নামতি জেনারেল হাসপাতালের দেয়া ছাড়পত্রে গজ বের করার কথা লেখা নেই। লেখা আছে ‘লাম্প এভডুমিন’। মেডিকেল ভাষায় যাকে বলা হয় টিউমার কিংবা পেট ফোলা জাতীয় সমস্যার সন্দেহে অপারেশন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন বলেন, ওই প্রসূতির মৃত্যুর খবর আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে থানায় মামলা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি। তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।