এবার বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন তরুণরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:১৮ এএম, ১১ এপ্রিল,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৫৯ পিএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সম্প্রতি তরুণদের মাঝে করোনাভাইরাস শনাক্তের হার অনেক বেড়ে গেছে। এটাকে উদ্বেগজনক লক্ষণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই বয়স্ক হলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মনে করেন, তরুণরাই বয়স্ক ও শারীরিকভাবে দুর্বলদের মাঝে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দেয়ার জন্য দায়ী। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ এপ্রিল করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৮ দশমিক আট শতাংশের বয়স ১৯ থেকে ৪৮ বছর। তাদের মধ্যে শতকরা ২৭ শতাংশের বয়স ৪৯ এর বেশি। আইইডিসিআর নিয়মিতভাবে বয়সভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ করে না। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তরুণদের মধ্যে শনাক্তের হার শতকরা ৬০ শতাংশেরও বেশি। গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনায় আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে শতকরা ৮০ দশমিক ৭৩ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি ছিল। আইইডিসিআর’র এক কর্মকর্তা বলেন, বাইরে বেশি বের হওয়ার কারণে তরুণরা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং তারা তাদের পরিবারের শারীরিকভাবে দুর্বল ও বয়স্ক সদস্যদেরকে ঝুঁকিতে ফেলছেন।
তিনি আরও বলেন, বয়স্করা সাধারণত ঘর থেকে খুব একটা বের হন না।
আইইডিসিআর পরিচালক তাহমিনা শিরিন বলেন, নিজেদের বাড়ি হচ্ছে এই ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। কারণ বাড়িতে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা তরুণরা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়। ৪০ বছরের কম বয়সীদের এখনো টিকা দেয়া হয়নি বলে তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান তিনি। এটাও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে জানিয়ে তাহমিনা শিরিন বলেন, আমরা যদি তরুণদের চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারি, তাহলে বয়স্কদের মৃত্যুর হার কমানো যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইনগুলো আরও বেশি সংক্রামক এবং তা তরুণদেরও আক্রান্ত করতে পারে। তরুণরা ঘরের বাইরে বেশি যান এবং বিভিন্ন কাজকর্মে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। এ কারণেই তারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বলেন জানান বিশেষজ্ঞরা।
আইইডিসিআর’র তথ্য অনুযায়ী, শতকরা ৬০ শতাংশ করোনা রোগী সম্প্রতি শপিংমলে গেছেন বা গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন। ৩০ শতাংশেরও বেশি রোগী মিছিল, সেমিনার বা অন্য কোনো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অনুষ্ঠানে গেছেন কিংবা মসজিদ বা অন্য কোনো উপাসনালয়ে গেছেন। আইইডিসিআর’র উপদেষ্টা মোশতাক হোসেন বলেন, মূলত এই বয়সের মানুষ চাকরি বা ব্যবসা করেন। তারা শারীরিকভাবে সক্রিয়। তারা অফিসে যান, গণপরিবহন ব্যবহার করেন এবং তাদের অনেকেই মাস্ক পরার ব্যাপারে যতœশীল না।
করোনাভাইরাস পরীক্ষার সংখ্যা বেড়েছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, এক পর্যায়ে দৈনিক পরীক্ষার সংখ্যা পাঁচ হাজারে নেমে আসলেও এখন প্রায় প্রতিদিনই ৩২ হাজার মানুষ পরীক্ষা করাচ্ছেন। অনেক তরুণরাও পরীক্ষা করাচ্ছেন। যেকোনো বয়সী মানুষের চেয়ে তরুণরাই বেশি আসছেন পরীক্ষা করাতে।
তিনি আরও বলেন, সংক্রমণের হার কমানোর জন্য কারফিউয়ের মতো একটি কঠোর লকডাউন দেয়া উচিত। এতে করে মানুষের চলাফেরা সীমিত হবে এবং সংক্রমণের হার কমে আসবে। গত বছর এপ্রিলে করোনা আক্রান্তদের মধ্যে ৫০ শতাংশেরও কম ছিলেন তরুণরা।