সরিষাবাড়ীতে নিলাম ছাড়া হাজার কোটি টাকার জুট মিল ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ১০ এপ্রিল,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৪৮ এএম, ১৯ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
জামালপুরের সরিষাবাড়ী এআরএ জুট মিল লিঃ দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় গোপনে নিলাম ছাড়াই বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পৌরসভার শিমলা বাজার এলাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এআরএ জুট মিল তড়িঘড়ি করে রাতের আধারে বিক্রি করায় সরকার শত কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে মিলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাট ব্যবসায়ী, নিয়মিত ও অনিয়মিত শ্রমিক এবং স্থানীয় সচেতন মহল এ অভিযোগ করেন। এতে সরকার ১’শ কোটি টাকার রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় ও জুটমিল সূত্রে জানাযায়, এআরএ জুট মিলটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি (পাকিস্তান) লিঃ ভোগদখল থাকা অবস্থায় বিগত ১৯৬৫ ইং সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় উক্ত ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং কোম্পানি পাকিস্তান লিঃ পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়।
এমতাবস্থায় মিল এবং উল্লেখিত ভূমিসহ বিগত ০১-১১-১৯৬৬ ইং সালে এসআরও নং ১০৪৬ (চক)/৬৬ মোতাবেক তৎকালীন পাকিস্তান সরকার গেজেট মূলে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে আওতাভুক্ত করেন।
এরপর বাংলাদেশ সরকার উক্ত ভূমিসহ অপরাপর ১৪ টি কোম্পানি বিগত ১০-০৭-১৯৭৩ ইং তারিখে (পত্র নং আই.এম ৪৩৬/৭৩ এ ২/৩১ মোতাবেক) ট্রেড ট্রেডিং করপোরেশন লিঃ ঢাকা বরাবরে হস্তান্তর বিক্রয় করেন।
উক্ত ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড ভোগদখল থাকাবস্থায় বিগত ৩০/০১/৮১ ইং তারিখে প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে মেসার্স এআরএ জুট মিলস লিমিটেড এর নিকট ২৬,০৪,২০০ টাকার বিনিময়ে ৩০৭৮ নং দলিল মূলে উক্ত সম্পত্তি শিল্প কারখানার বিকাশ সম্প্রসারন ছাড়া বিক্রয়, হস্তান্তর কিংবা বিলুপ্ত করা যাবে না শর্তে হস্তান্তর করেন।
অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গত ২৪ মার্চ রাত পৌনে ১১টার সময় সরিষাবাড়ী এআরএ জুট মিলস লিঃ এর হাজার কোটি টাকার সম্পদ, স্থাপনা, কারখানা ও ভূমি কর্তৃত্ববিহীন জনৈক আনোয়ার বছির খান, পিতা মৃত আজাহার আলী খান, মাতাঃ মিসেস রুমানা বেগম, সাং-শিমলা বাজার, সরিষাবাড়ী, জামালপুর নামের ব্যাক্তি বিক্রয়/হস্তান্তর করেছেন বলে জানা গেছে।
উক্ত বিক্রয় প্রক্রিয়া সরিষাবাড়ী সাব-রেজিষ্টার বিলকিস আরা, অফিস সহকারী প্রধান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মুসা প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উক্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগসাজসে এবং সহযোগীতায় সরিষাবাড়ী সাব-রেজিষ্টার অফিসের ভাই-ভাই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের সদস্য কামাল হোসেন (সনদ নং-৪১), এসআর অফিস সরিষাবাড়ী, শাহজাহান আলী তালুদার (সনদ নং-৫৮), ফারুক হোসেন (সনদ নং-৮৭), আলমগীর হোসেন (সনদ নং-৫৬) এসআর অফিস সরিষাবাড়ী ব্যক্তিগণ উক্ত জুট মিলের ভূমি দলিল নং-১৯১৩,১৯১৪,১৯১৫,১৯১৬,১৯১৭,১৯১৮,১৯১৯ এর মাধ্যমে হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকা মূল্য দলিলে প্রদর্শিত হওয়ার কারনে বাংলাদেশ সরকার অর্থাৎ জনগণ প্রায় ১’শ কোটি টাকার রাজস্ব প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রকাশ্য নিলামে হস্তান্তর দলিল এবং রাতের আধারে হস্তান্তর দলিল টালি করলেই মিলের বর্ণিত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উপস্থিতি প্রমান করা সহজ হবে বলে স্থানীয় সুশিল সমাজ মনে করেন।
একই সাথে যে ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেড বিক্রয় করা হয় প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে সেই একই সম্পত্তি প্রকাশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রয় না করে রাতের আধারে সরিষাবাড়ী সাব রেজিস্ট্রি অফিস আওতাবিহীন ক্ষমতাবলে কর্তৃত্ববিহীন দাতার দাখিলি দলিলাদি সরিষাবাড়ী সাব-রেজিষ্টার দূর্নীতিমূলক ক্ষমতার অপব্যবহারক্রমে রেজিস্ট্রির জন্য গ্রহন করতে পারেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরী বলে মনে করা হচ্ছে।